আহমেদুজ্জামান,কমলগঞ্জঃ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে নাচ-গানের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে মণিপুরীদের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা। শনিবার ভোরে এ আয়োজনের সমাপ্তি হয়। কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে রাসনৃত্যের বর্ণিল এ উৎসব উপভোগ করতে হাজির হয় দেশ বিদেশের হাজার হাজারো মানুষ।
শুক্রবার(১৫ নভেম্বর) দুপুর ১টায় রাখাল নৃত্যের মধ্য দিয়ে রাসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।এসময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কমলগঞ্জে হাজির হয়েছিল নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ নানা পেশার হাজারো মানুষ। তাদের পদচারণায় সকাল থেকে মুখর হয়ে ওঠে মণিপুরি পাড়াগুলো। শনিবার ঊষালগ্নে এ উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে। উপজেলার মাধবপুর জোড়া মন্ডপ মাঠে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ও আদমপুরের মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স মাঠে সানাঠাকুর মন্ডপে মণিপুরী মী-তৈ সম্প্রদায়ের আয়োজনে মহারাসোৎসব হয়েছে ।
রাসোৎসব ঘিরে প্রতিবারের মতো এবারও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। বসেছিল শত শত রকমারি দ্রব্যের বিশাল মেলা। উৎসবে যোগ দিতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার ভক্ত-অনুরাগী পর্যটক এসেছেন এখানে। ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বিভিন্ন বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যদের সহযোগিতায় সফল হয় অনুষ্ঠান।
মাধবপুর (শিববাজার) জোড়ামন্ডপ মাঠে মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের উদ্যোগে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা ১৮২তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে আদমপুর গ্রামে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ও মৈতৈ মণিপুরিদের ৩৯তম আলাদা উৎসব হয়েছে।
মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ জানান, মাধবপুর জোড়ামন্ডপ রাসোৎসব এ বিভাগের মধ্যে ব্যতিক্রমী আয়োজন। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে। বর্ণময় শিল্পসমৃদ্ধ বিশ্বনন্দিত মণিপুরী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবে সবার মহামিলন ঘটে। মণিপুরিদের রাসলীলার অনেক ধরন। নিত্যরাস, কুঞ্জরাস, বসন্তরাস, মহারাস, বেনিরাস বা দিবারাস। শারদীয় পূর্ণিমা তিথিতে হয় বলে মহারাসকে মণিপুরীর পূর্ণিমারাসও বলে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এই উৎসব উপলক্ষে প্রায় ২০দিন ধরে প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করেছি আমরা। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, ও বিজিবি মোতায়েন ছিল উৎসবের নিরাপত্তায়।
উল্লেখ্য, মণিপুরিদের প্রধান উৎসব রাসপূর্ণিমা বা রাস উৎসব শরতের পূর্ণিমায় অনুষ্ঠিত হয়। তার আবেদন ধর্মের সীমানা ভেঙে সব সম্প্রদায়ের মানুষকে কাছে টেনে নিয়েছে। উপজেলার মাধবপুর শিববাজারে মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের (জোড়াম-পে) ১৮২তম বছর এবং আদমপুরের তেতইগাঁওয়ে মণিপুরি মৈতৈ সম্প্রদায়ের ৩৯বছর ধরে মণিপুরীদের রাস উৎসব উদযাপিত করে আসছে। রাস উৎসবের দুটি পর্ব। দিনের বেলায় রাখালরাস আর রাতে মহারাস অনুষ্ঠিত হয়।