হযরত আলী,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় দাদন ব্যবসায়ীদের চড়া সুদে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী, নিত্যদিনে চলছে তর্কবির্তক, ঝগড়া বিদাদ,দাদন ব্যবসায়ীদের নিজের ইচ্ছামত টাকাদাবী করে মামলা দ্বায়ের করে। টাকা দিতে না পেয়ে অনেক ঘর-বাড়ি ছাড়া। দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন।
দাদন ব্যবসায়ীর দাবীকৃত টাকা পরিশোধ করেও স্বাক্ষরকৃত ফাঁকা ষ্ট্রাম্প ও ফাঁকা ব্যাংকচেক ফিরে না পাওয়ায় দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় পৃথক পৃথক ভাবে লিখিত অভিযোগ ও গণপিটিশন দিয়েছেন এলাকাবাসী।
পৃথক পৃথক ভাবে অভিযোগকারী উপজেলা দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের অনিল চন্দ্র বলেন, ২০ শতাংশ সুদে দুই দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছেলে অসুস্থ থাকার কারণে নির্ধারিত সময়ে ওই টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। তাই দাদন ব্যবসায়ীরা তাঁকে প্রায়ই অপদস্থ করতেন। পরে বাধ্য হয়ে বসতভিটার আট শতক জমি দাদন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। এখন পর্যন্ত তার দেয়া চেক ও স্ট্যাম্প ফিরত দেয়নি ওই দাদন ব্যবসায়ী।
অপর অভিযোগকারী পূর্ব সিন্দুর্না এলাকার মোহন চন্দ্র রায় বলেন, দাদন ব্যবসায়ীর দাবীকৃত টাকা পরিশোধ করেও ফিরে পাচ্ছেন না স্বাক্ষরকৃত ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ফাঁকা ব্যাংকচেক।
জানাগেছে, হাতীবান্ধা উপজেলার গ্রামগঞ্জ,শহরবন্দর সব জায়গায় এখন ছড়িয়ে পরেছে দাদন ব্যবসায়ীদের চড়া সুদে ব্যবসা। গ্রহিতাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ফাঁকা স্ট্যাম্পে ও ফাঁকা ব্যাংকচেকে স্বাক্ষর করে নেন। তারপর দেওয়া হয় চড়া সুদে টাকা। গ্রহিতা চড়া সুদের টাকা দেওয়া দেরি হলে দাদন ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামত ব্যাংক চেকে টাকার পরিমাণ বসে দিচ্ছে চেক জালিয়াতির মামলা।
অভিযোগ রয়েছে অনেকেই দাদন ব্যবসায়ীর দাবীকৃত টাকা পরিশোধ করেও ফিরে পাচ্ছেন না স্বাক্ষরকৃত ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ফাঁকা ব্যাংকচেক। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাদন ব্যবসাকে কেন্দ্র করে হাতীবান্ধা উপজেলার গুটি কয়েক ব্যক্তি হয়েছে অঢেল সম্পত্তির মালিক। কৃষক-ব্যবসায়ি ছাড়াও বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের চেক বন্ধক নিয়ে দাদন দেওয়া এসব ব্যক্তির কাজ।
এ ছাড়া কিছু মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত পরিবারের লোকজন শিক্ষক ও ব্যাবসায়িদের চেক ও স্ট্যাম্প বন্ধক নিয়ে উচ্চ সুদে দিচ্ছেন ঋণ। দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে অনেকেই সর্বশান্ত হয়েছেন। সুদে-আসলে জমা টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই মামলার কারনে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন অন্যত্রে।
সম্প্রতি ভুক্তভোগী এবং স্থানীয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে বিভিন্ন দপ্তরে ২০ থেকে ২১জন দাদন ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দিয়েছেন। শিক্ষকেরা জানান, এসব চেক দিয়ে টাকা ব্যাংক থেকে তুলতে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সে জন্য স্ট্যাম্প স্বাক্ষর করে নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষক ও চাকরিজীবীকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সুদে চেক বই বন্ধক রেখে টাকা দেন। আর কৃষক,ব্যবসায়ীসহ অন্য পেশার মানুষকে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ সুদে টাকা দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশের অনিইচ্ছুক এক স্বর্ন ব্যবসায়ির বলেন, এক দাদন ব্যাবসায়ীর কাছে তিনি ৬ লক্ষ টাকা নিয়েছি তাকে প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা লাভ দিতে হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ২০লক্ষ টাকার মত লাভ দিয়েছি। সময় মত তাকে সুদের টাকা দিতে না পারলে লোক পাঠিয়ে তুলে নিয়ে যায় তার অফিসে। এভাবে সে অনেকের বাসাবাড়ি,জমিজমা লিখে নেয়। কয়েক বছর আগে ওই দাদন ব্যবসায়ির কিছুই ছিলো না। বর্তমানে তার প্রায় ১০ কোটি টাকার উপরে সম্পত্তি।
গত ৫ আগস্টের আর এক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন,আমার কাছে এক দাদন ব্যবসায়ী ২লক্ষ ৫০হাজার টাকা পাবে। তাকে এ পর্যন্ত প্রায় ২লক্ষ টাকার উর্দ্ধে লাভ দিয়েছি। আমি তাকে সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হয়েছি বলে আমাকে কিছু দলীয় ছেলে দিয়ে তুলে নিয়ে যায় এবং ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার অডিটোরিয়াম এলাকার নুর মোহাম্মদ বলেন,আমি অসুস্থতার কারনে দুজন দাদন ব্যবসায়ীর কাছে থেকে তার মধ্যে একজন সাবেক চেয়ারম্যানও রয়েছে। এ পর্যন্ত তাদেরকে ১৫ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা করে সুদ দিয়েছি। তাদের তাদের আসল টাকাও পরিশোধ করেছি কিন্তু তাড়া নাকি এখনো ১০-১২ লক্ষ টাকা করে লাভ পাবে । আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। প্রতিদিন তারা আমাকে হুমকি দিচ্ছে আদালতে চেকের মামলা করবে বলে। কারন তাদের কাছে আমার চেক ও স্ট্যাম্প জমা রয়েছে ।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি বলেন,অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।