সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের দেওয়ান হাছনরাজা’র জমিদারী সম্পত্তির উত্তরাধিকারী থেকে বঞ্চিত হওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার বেলা ১১টায় শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সুমি চৌধুরী জানান, তিনি দেওয়ান হাছন রাজা’র প্রপ্রৌপুত্রী সুমী চৌধুরী, তার পিতা দেওয়ান আসরাক রাজা চৌধুরী, মাতা মাজেদা। তিনি সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের তেঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান এবং হাছনরাজা’র ৫ম বংশধর। তার দাদা সুলতানুর রাজা চৌধুরী কেছরা মিয়া। প্রপিতামহ দেওয়ান হাছনরাজা’র প্রথম ও জেষ্ট্য পুত্র খান বাহাদুর দেওয়ান গণিউর রাজার চৌধুরী তার পিতামহ।
তিনি জানান, দেওয়ান হাছনরাজা’র মৃত্যুর পর রেখে যান ৪ পুত্র। তার পিতামহ খান বাহাদুর দেওয়ান গণিউর রাজার চৌধুরী, দেওয়ান হাসিনুর রাজা চৌধুরী, দেওয়ান একরামুর রাজা চৌধুরী (রামপাশার জমিদার), দেওয়ান আফতাবুর রাজা চৌধুরী। দেওয়ান হাছনরাজা তখন প্রথম ও জেষ্ট্যপুত্র হিসাবে তার পিতামহ খান বাহাদুর দেওয়ান গণিউর রাজার চৌধুরী জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব পান।
তার পিতামহের মৃত্যু হয় ১৯৩২ সালে। মৃত্যুর দুই বছর আগে অর্থাৎ ১৯৩০ সালে তিনি দেওয়ান আফতাবুর রাজা চৌধুরী জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব পান। এ সময় তার পিতামহ খান বাহাদুর দেওয়ান গণিউর রাজা চৌধুরীর ঔরসজাত দুই সন্তান রেখে যান। একজন হলেন দেওয়ান সুলেমান রাজা চৌধুরী গেদা মিয়া ও তার আপন দাদা দেওয়ান সুলতানুর রাজা চৌধুরী কেছরা মিয়া।
সুমি চৌধুরী বলেন, তার দাদা দেওয়ান সুলতানুর রাজা চৌধুরী কেছরা মিয়ার ঔরসজাত সন্তান হলেন ৫ জন। দেওয়ান জাফরান রাজা চৌধুরী, দেওয়ান আঙ্গুর রাজা চৌধুরী, দেওয়ান নুর রাজা চৌধুরী ও দেওয়ান আসফাক রাজা চৌধুরী। তারা অবিবাহিত অবস্থায় মারা যান। জীবিত থাকেন শুধু তার পিতা দেওয়ান আসরাক রাজা চৌধুরী এবং তার ৩ বোন মোছা. মিনু চৌধুরী, মোছা. কিনু চৌধুরী ও মোছা. ফিনু চৌধুরী।
তিনি বলেন, তার পিতামহ দেওয়ান আফতাবুর রাজা চৌধুরীকে জমিদারী দায়িত্ব দেওয়ার ২ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৩০ সালে দুইটি ওয়াকফ করে যান, একটি হলো আগামী প্রজন্মের ভরণপোষণের জন্য টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে। অপরটি মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, কবরস্থান প্রতিষ্ঠায় ব্যয় করা, গরীব-দুখিদের সাহায্য করা, মহরম, সবেবরাতে মিলাদ-মাহফিল ও হাছনরাজার পূর্ব পুরুষদের রূহের মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত পেশ করা ও সিন্নি বিতরণ করা, ঈদের দিন গরীবদের জামা-কাপড় ও ঈদের খরচ প্রদান করা বিষয় উল্লেখ করে ওয়াকফ করেন। যার দলিল নং-৩৬৫৪, তারিখ-২৫.০৯.১৯৩০ ইং।
সুমি চৌধুরী বলেন, তার পিতামহ খান বাহাদুর দেওয়ান গণিউর রাজা চৌধুরী ছিলেন সুনামগঞ্জের একজন ম্যাজিষ্ট্রেট। তিনি ছিলেন একজন সৎ নির্লোভ ব্যক্তি। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর তার নামে কোনো সম্পত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং ১৯৫২ সালের স্যাটেলমেন্ট জরীপেও তার নামে কোনো সম্পদ উল্লেখ করা হয়নি। তবে সম্পত্তির সাম, ছিটা ও একক ম্যাপ তাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।
তিনি বলেন, তাদের কাছে সুনামগঞ্জ পৌরসভার ওয়ারিশান সনদপত্র, ভোটার আইডি কার্ড, ওয়াকফ দলিল, অন্যান্য দলিলপত্র সংরক্ষিত আছে। এ ছাড়াও তিনি উত্তরসূরী হিসাবে সুনামগঞ্জের আদালতের নোটারী পাবলিক সম্পাদন করেছেন। হাছনরাজা’র বংশানুক্রমে তিনি একজন সঠিক উত্তরসূরী হয়েও শত বছর ধরে উত্তরাধিকারী সূত্রের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। তিনি সম্পত্তির ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে চান।
সুমি চৌধুরী আরও বলেন, ২০-০১-১৯২১ সালে শ্রীহট্ট সাব জজ প্রথম আদালতে দেওয়ান আফতাবুর রাজা চৌধুরী বাদী হয়ে ৩৮৬ নং বাটোয়ারা মামলা দায়ের করেন। তখন ওই মামলার বিবাদী করেন-১নং খান বাহাদুর দেওয়ান গণিউর রাজা চৌধুরী,২নং দেওয়ান হাসিনুর রাজা চৌধুরী। উভয় পিতা দেওয়ান হাছনরাজা চৌধুরী। সাং তেঘরিয়া, পং লক্ষণশ্রী, সুনামগঞ্জ। ৩ নং বিবাদী করা হল-দেওয়ান একলিমুর রাজা চৌধুরী, পিতা দেওয়ান হাছনরাজা চৌধুরী। সাং রামপাশা পং কৌড়িয়া স্টেশন, বালাগঞ্জ।
১৯২৬ ইং সনের ২২ ডিসেম্বর দেওয়ান আফতাবুর রাজার পক্ষে মামলার রায় হয়। ওই রায়ের বাদী দেওয়ান আফতাবুর রাজা চৌধুরী ৩৩০৭ দ. আনা বাদীর পাওনা রয়েছে। ১নং বিবাদী খান বাহাদুর দেওয়ান গণিউর রাজা চৌধুরী অংশ দেয় ১৪৬৯ দ. আনা। উক্ত ১নং বিবাদী বাদীকে দেয়। ২নং বিবাদী দেওয়ান হাসিনুর রাজা তার নিজ অংশ দেয় ১৪৬৯ দ. আনা। ৩ নং বিবাদী দেওয়ান একলিমুর রাজা চৌধুরী তার অংশ দেয় ১৪৬৯ দ. আনা। কিন্তু ২নং এবং ৩ নং বিবাদী বাদীর মামলা খরচ বাবত অংশ কেটে নেওয়ার পর ৩৩০৭ দ. আনা বাদীর পাওনা রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, দেওয়ান আফতাবুর রাজা চৌধুরী তাঁর আওলাদের জন্য একটি ওয়াকফ সম্পাদন করে যান। যার ইসি নং-১১৬৫২। ১৯৪১ সালে ওয়াকফকৃত সম্পত্তির মূল্য ২৫,০০০/-টাকা। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ইং সরকারী হিসাবে জায়গার পরিমাণ ৪৭৯১.৩৫ একর। পরিবারের অন্যান্য ভাইদের প্ররোচনা তাদের মধ্যে পারিবারিক বাটোয়ারা করিয়া নিজ নিজ নামে ওয়াকফয়ের সহায় সম্পত্তি নিজ নিজ নামে চলমান আরএস জরীপে রেকর্ড করান এবং ২/৩ শত লোকের কাছে বিক্রি করিয়াছেন। সম্পত্তি উদ্ধারসহ রক্ষার জন্য বর্তমান এসএ, আরএস ও ডিপি খতিয়ান ২/৩ শত জাবেদা পর্চা সংগ্রহ করিয়াছেন তাদের একজন। বর্তমানে সরকারী হিসাবে ১ শত বা ১৫০ শত একর সম্পত্তি চলমান রয়েছে। যাহা নিয়ে ওই সময়কালে সরকারের বেশ কয়েকটি মামলা আছে। দেওয়ান আফতাবুর রাজা চৌধুরীর ১৬ আনা অংশ ওয়াকফকৃত।
সংবাদ সম্মেলনে তার বাবা দেওয়ান আসরাক রাজা চৌধুরীর একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসাবে সুমি চৌধুরী ও স্বামী লিটন ইসলাম ভূইঁয়া তাদের পাওনা সমুদয় সম্পত্তি বুঝিয়া পেতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।