আমিনুল হক, সুনামগঞ্জ :
সুরমা নদীতে শুধু নৌকা আর নৌকা। পুরো সুরমা জুড়ে যেন নৌকার হাট বসেছে। ধোপাজান, চলতি নদী, যাদুকাটা এলাকার মানুষ বলছেন আমাদের এলাকা সাগর বানাইয়া পালাইতাছে। যেন দেখার কেউ নেই…। সুরমা পাড়ের শ্রমিকরা বলছেন হুনছি ‘বালু আটকাইবার দায় বেড়া দেওয়া অইছে’। বেড়ায় ঐ বালু খাইব তাতে কারও কিছু করার আছে ।
এ যেন শর্ষের মাঝেই ভুত, হতাশ সাধারণ মানুষ। সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর উপজেলাধীন ইজারাবিহীন ধোপাজান-চলতি নদী ও যাদুকাটায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু-পাথর লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে, প্রকাশ্য দিবালোকে সুরমা ইউনিয়নের মইনপুর গ্রামের সুরমা নদীরপাড় যেন ‘পাথর ডিপোতে’ পরিণত হয়েছে।
এখানেই চলছে ক্র্যাশারে পাথর ভাঙা, নৌকায় লোড করার ব্যবসা। বালু-পাথর লোড করতে অর্ধশত বেল্ট স্থাপন করে নির্বিঘেœ অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এখন চলতি নদীতে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভিন্ন পথ অবলম্বন করে জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন সিন্ডিকেট। তারা হলেন কবির আহমদ, জাইদ হোসেন, সন্তোষ দাস, ফয়েজ মিয়া ও জাকির হোসেন।
তাদের দায়িত্ব হলো মইনপুর গ্রামে আসা বালু-পাথর বেচাকেনা এবং ক্র্যাশার মেশিনে পাথর ভেঙে বিক্রি করা। এই ব্যবসার আড়ালে রয়েছেন আরও একাধিক ব্যক্তি। তাদের দায়িত্ব হলো দিনে ও রাতে সুযোগ স্থানীরা জানান, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার অংশে নদীপথ ও সড়কপথে এতোদিন দিনে ও রাতে সময় সুযোগে ড্রেজার মেশিন চালিয়ে পাথর উত্তোলন করে বাল্কহেড ও ‘পঙ্গপাল’ নামক যানবাহন ভর্তি করে অবাধে বেচাকেনা করা হতো।
এখন দিনের বেলায় বন্ধ থাকলেও রাতের বেলায় ড্রেজার দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে নদী থেকে। রাতের বেলায় নদী পথে পাথরবাহী নৌযান আসা-যাওয়া করছে বলেও জানান স্থানীয়রা। এ নিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়, এমনকি সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের পক্ষ থেকেও সভা সমাবেশ হয়েছে।
কিন্তু কাজের কাজ হয় না কিছুই। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া চলতি নদীর (ধোপাজান) মোহনা থেকে অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন ও পরিবহণ প্রতিরোধের জন্য সুরমা নদীর মোহনা থেকে অর্থাৎ চলতি নদীর প্রবেশ মুখ থেকে উত্তর সীমান্ত খাসিয়া পাহাড় পর্যন্ত অংশে সব ধরনের বাল্কহেড নৌকাসহ বালু পরিবহনে ব্যবহৃত জলযান প্রবেশ নিষিদ্ধ করে আদেশ জারি করেন।
সবশেষ শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএনও অতীশ দর্শী চাকমা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসমাইল রহমান, তহশিলদার ছিদদিকুর রহমান পুলিশ, ডিবিসহ দিনভর সুরমা নদীর মোহনা থেকে চলতি নদীর প্রবেশ মুখে বাঁশের বেড়া দেন।
যাতে অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালু-পাথর কেউ নিয়ে যেতে না পারে। তবে কাজ হয়নি তাতেও। প্রশাসনের কর্মকর্তারা চলে আসার পরই নৌকা ঢুকতে শুরু করে নদীতে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই, নানা পন্থা অবলম্বন করছি কিন্ত সুফল পাচ্ছিনা, আমি দেখছি কি করা যায়।