নিজস্ব প্রতিবেদক: অভিযোগর পর অভিযোগ অবশেষে নেত্রকোনা মদন উপজেলার সেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়াকে চট্রগ্রাম বিভাগে বদলী করা হয়েছে। গত ১৭ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখার উপসচিব মুহাম্মদ ইব্রাহীমের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন থেকে এতথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশটি অবিলম্বে কার্যকরের বিষয়টি উল্লেখ।
ইউএনও মো. শাহ আলম মিয়ার বিরুদ্ধে গত ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানোর নির্দেশদাতা হিসেবে মদনের কামরুল হাসান, আবুল হাসেম, সৈয়দ মোশারফ হোসেনসহ আটজনের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জমা পড়ে। এবিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়। ঠিক একইদিনে সেই ইউএনও’র বিরুদ্ধে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক বরাবরে মদনের কাইটাল ইউনিয়নের ছিদ্দিকুর রহমান, আবুল হোসেনসহ ১৭১ জনের স্বাক্ষরিত আরেকটি অভিযোগ জমা পড়ে। জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছিলেন।
এছাড়াও এরআগে মদনের ইউএনও মো. শাহ আলম মিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ নয়ছয় ও অনিয়ম বিষয়ে ‘দ্যা মেইল বিডি ডটকমে’ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
‘দ্যা মেইল বিডি ডটকমে’ চলতি মাসে “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উপর গুলির নির্দেশদাতার অভিযোগ মদনের ইউএনও’র বিরুদ্ধেগত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ও চলতি মাসে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানোর নির্দেশদাতা হিসেবে মো. শাহ আলম মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগে উল্লেখ, সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও তাঁর ছোট ভাই নেত্রকোনা-৪ (মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী) আসনের সাবেক সাংসদ সাজ্জাদুল হাসানের ঘনিষ্টজন সুবাধে মদনের ইউএনও হিসাবে শাহ আলম মিয়া যোগদান করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপিসহ বিরোধী মতের উপর কঠোর আচরণ করেন তিনি। গত ১৮ জুলাই মদনে আ.লীগ নেতাকর্মীদের হাতে থাকা রামদা ও বিভিন্ন দেশীও অস্ত্রসহ তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ বাহিনীকে সাথে নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানোর নির্দেশ প্রদান করেন ইউএনও।
এতে করে কলেজ ছাত্র ও মৈধাম গ্রামের খোকন মিয়ার ছেলে নবাব এবং চাঁনগাও গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল বারেক (৬৫) তাদের দুজনের সারা শরীর ঝাঁঝরা এবং দুজনের চোখ চিরদিনের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও পুলিশের গুলি ও আ.লীগ নেতাকর্মীদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অনেক ছাত্র-জনতা আহত হন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ, ইউএনও বিগত সময়ে আ.লীগের কুখ্যাত নেতাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। পাঁচ আগস্ট আ.লীগ সরকার পতনের পর আমজনতাকে পাশ কাটিয়ে বিএনপি’র কিছু সুবিধাভোগী নেতাকর্মীদেরকে বিভিন্ন রকম অবৈধ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন ইউএনও। যার কারণে বিএনপি দলে ভেতরে কোন্দল এবং ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শাহ আলম মিয়া মদনের ইউএনও হিসেবে কর্মরত থাকলে যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তদন্তপূর্বক প্রশাসন সংস্কারের অংশ হিসেবে ইউএনও’র পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান এবং তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন অভিযোগকারীরা।
মদনের কাইটাল ইউনিয়নের ছিদ্দিকুর রহমান, আবুল হোসেনসহ ১৭১ জনের স্বাক্ষরিত আরেকটি অভিযোগে উল্লেখ, মদনের কাইটাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাফায়াত উল্লাহ (রয়েল) কর্মসূচী প্রকল্পে বিভিন্ন ভুয়া নাম ব্যবহার করে তাদের নামে সিম কার্ড ক্রয় করে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে। এ ইউনিয়নে প্রায় ২০ ভাগ লোক আ.লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থক। পক্ষান্তরে ৮০ ভাগ লোক টিসিবি কার্ড সুবিধা থেকে বঞ্চিত। প্রায় সম্পূর্ণ টিসিবি কার্ড আ.লীগ পরিবারের লোকজন ও মেম্বারগণ নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে বিতরন করেছে। একই পরিবারে একাধিক টিসিবি কার্ড ও ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রায় তিন শতাধিক ভুয়া টিসিবি কার্ড রয়েছে। এমন বিষয়ে ইউএনওকে জানানোর পরেও ব্যবস্থা নেয়নি। এরকম দুর্নীতির সাথে জড়িত চেয়ারম্যান, মেম্বার, ইউপি সচিবসহ ইউএনও শাহ আলমের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন স্বাক্ষরকারী ১৭১ জন অভিযোগকারী।
এছাড়াও উপজেলা পরিষদের বাউন্ডারীর ভেতরে যেকোন নির্মান, সংস্কার ও মেরামত এ জাতীয় কার্য স্থানীয় সরকার বিভাগের বাজেট থেকে সম্পাদিত হয়ে থাকে। অথচ গ্রামীন অবকাঠামোর বিভিন্ন প্রকল্প কাবিটার আওতায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর প্রথম পর্যায়ে ‘পুরাতন নির্বাহী অফিসের কার্যালয়ের পেছনে মাটি ভরাট’ প্রকল্পে দুই লক্ষ টাকা ও তৃতীয় পর্যায়ে ‘পুরাতন ইউএনও অফিসের সামনে মাটি ভরাট’ প্রকল্পের জন্য আরও দুই লক্ষ টাকার বিপরীতে পুরাতন ইউএনও অফিসের সামনে বা পেছনে মাটিই ফেলানো হয়নি।
আবার একই অর্থ বছরে কাবিখার আওতায় তৃতীয় পর্যায়ে ‘উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস মাঠে মাটি ভরাট’ প্রকল্পে পাঁচ দশমিক তিন ছয় মে.টন গম ও কাবিটার আওতায় ‘উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সামনে মাটি ভরাট’ প্রকল্পে আরও এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকা এবং কাবিখার আওতায় ‘উপজেলা কোয়ার্টারের সামনে মাটি ভরাট’ কাজে পাঁচ দশমিক তিন ছয় মে.টন চাল ও কাবিটার আওতায় ‘উপজেলা কোয়ার্টারের সামনে মাটি ভরাট’ কাজে এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকার প্রকল্পগুলোর বিপরীতে আদৌ মাটি ভরাটের কাজ হয়নি। এসব প্রকল্পগুলো পুরাতন ইউএনও অফিসের সামনে ও পেছনে অবস্থিত।
গ্রামীন অবকাঠামোর এ ধরণের বিভিন্ন কর্মসূচীর অনিয়মের বিষয়ে গত ৫ জুলাই মাসের “মদন ইউএনও’র কার্যালয়ে মাটি ভরাট দেখিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অর্থের নয়ছয়” এবং গত ১৬ অক্টোবর “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উপর গুলির নির্দেশদাতার অভিযোগ মদনের ইউএনও’র বিরুদ্ধে” শিরোনামে ‘দ্যা মেইল বিডি ডটকম’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।