কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানোর নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযোগ উঠেছে নেত্রকোনা মদনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়ার বিরুদ্ধে।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) এমন ধরনের অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, অভিযোগপত্রটি ময়মনসিংহ বিভাগীয় কশিনার কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
এরআগে গত ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে মদন উপজেলার কামরুল হাসান, আবুল হাসেম, সৈয়দ মোশারফ হোসেন, আ. আহাদ, আবুল হায়েছ খান, মো. হাইউল মিয়া, মো. মোশারফ হোসেন ও পলাশ মিয়া এই আটজনের স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রটি নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে প্রথম তিনজন অভিযোগ ও পত্রে স্বাক্ষর প্রদানের বিষয়টি প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন।
অভিযোগে উল্লেখ, সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও তাঁর ছোট ভাই নেত্রকোনা-৪ (মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী) আসনের সাবেক সাংসদ সাজ্জাদুল হাসানের ঘনিষ্টজন সুবাধে মদন উপজেলায় ইউএনও হিসাবে শাহ আলম মিয়া যোগদান করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপিসহ বিরোধী মতের উপর কঠোর আচরণ করেন তিনি। গত ১৮ জুলাই মদনে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের হাতে থাকা রামদা ও বিভিন্ন দেশীও অস্ত্রসহ তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ বাহিনীকে সাথে নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানোর নির্দেশ প্রদান করেন ইউএনও।
এতে করে কলেজ ছাত্র ও মৈধাম গ্রামের খোকন মিয়ার ছেলে নবাব এবং চাঁনগাও গ্রামের আব্দুল বারেক (৬৫) তাদের দুজনের সারা শরীর ঝাঁঝরা এবং দুজনের চোখ চিরদিনের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও পুলিশের গুলি ও আ.লীগ নেতাকর্মীদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অনেক ছাত্র-জনতা আহত হন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ, ইউএনও বিগত সময়ে আ.লীগের কুখ্যাত নেতাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। পাঁচ আগস্ট আ.লীগ সরকার পতনের পর আমজনতাকে পাশ কাটিয়ে বিএনপি’র কিছু সুবিধাভোগী নেতাকর্মীদেরকে বিভিন্ন রকম অবৈধ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন ইউএনও। যার কারণে বিএনপি দলে ভেতরে কোন্দল এবং ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
শাহ আলম মিয়া মদনের ইউএনও হিসেবে কর্মরত থাকলে যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তদন্তপূর্বক প্রশাসন সংস্কারের অংশ হিসেবে ইউএনও’র পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান এবং তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন অভিযোগকারীরা।
এ বিষয়ে গুলিবিদ্ধ কলেজ ছাত্র মেহেদি হাসান মিন্টু ওরফে নবাব প্রতিবেদককে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ভাই-বোনদের উপর অতর্কিত গুলি করতেছে পুলিশরা। তাদের প্রতি সহমত পোষন করে গত ১৮ জুলাই মদন কলেজ থেকে আমরা ছাত্র-সমাজ মিছিল বের করে পাবলিক হলের দিকে যাচ্ছিলাম। মিছিলটি খাদ্য গুদামে কাছে আসলে ইউএনও ও পুলিশের সহযোগিতায় আ.লীগের অঙ্গ সংগঠনের ক্যাডাররা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিশোঠা নিয়ে মিছিলে হামলা চালিয়ে মারপিঠ করে। প্রবল প্রতিরোধে অগ্রসর হতে না পেরে আমরা পিছু হটে মগড়া নদীর ব্রীজের কাছে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বসে পড়ি।
আধা ঘন্টার পর ইউএনও শাহ আলম মিয়া ৩০-৩৫ পুলিশ নিয়ে আমাদের উপর চড়াও হয়। এ সময় ইউএনও সাহেব পুলিশের সার্কেল এসপি রবিউল আলম ও সাবেক ওসি উজ্জল কান্তিকে বলে আপনারা গুলি করেন না কেন। কয়েকটারে মেরে ফেলেন। এরপর পুলিশ আমাদের উপর পাখির মতো গুলি করেছে। আমার সারা শরীর ও চোখে গুলিবিদ্ধ হয়। এখন আগের মতো চোখে দেখতে পাচ্ছি না। ভবিয্যত ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ধ্বংস করে দিয়েছে ইউএনও। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কাছে এই ইউএনও সঠিক বিচার দাবি করেন তিনি (নবাব)।
মদনের ইউএনও মো. শাহ আলম মিয়ার সরকারি ও ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়। ফোন না ধরায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।