স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ
শরতের গাঢ় নীল আকাশকে আংশিক কালো মেঘ।ফলে সারাদেশে কোথাও কোথাও কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কান্নায় যেমন ম্লান হয়েছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের শিউলি, শেফালী ও কাশফুল তেমনি শারদীয় উৎসবের আমেজে পড়েছে ভাটা। মহাঅষ্টমী পূজার শেষে দেবীর বিদায় বারতা শুরু হয়ে গিয়ে মহানবমীতে ভক্তের হৃদয়ে বিরহের সুর মুর্হুমুর্হু বাজে।
বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুসারে, এবার মহানবমী ও দশমী পূজা একই দিন পড়েছে। মহানবমী পূজা শেষে দশমী তিথি আরম্ভ হয়ে যাওয়ায় আজই দশমী পূজা সম্পন্ন হবে। আজ শনিবার (১২ ই অক্টোবর) সকাল ৬টা ১২ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিতপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সকাল ৮টা ২৬ মিনিটের মধ্যে দেবীদুর্গার দশমী বিহিতপূজা ও পূজান্তে দর্পণ বিসর্জন করা হবে।
নবরাত্রির মহানবমী হল শক্তি সাধনার শেষ দিন। নবমীর পুণ্য তিথিতে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে বিশ্বে শুভ শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন দেবী দুর্গা। নবমী তিথি শুরু হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট সর্বমোট ৪৮ মিনিটে সন্ধিপূজা হয়। মূলত দেবী চামুণ্ডার পূজা করা হয় এসময়। এ সময়েই দেবী দুর্গার হাতে বধ হয়েছিল মহিষাসুর।
মহা নবমীতে দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন, তাই তাকে মহিষাসুর মর্দিনী বলা হয়।আর রাম বধ করেছিলেন রাবণকে। এই দিনে অনেকে মেয়ের পুজো করে এবং শুভ সময়ে হবন করে তারপর উপবাস ভেঙে যায়। । কথিত আছে নবমীতে মায়ের আরাধনা, মন্ত্র জপ, হবন করলে সৌভাগ্য হয়।
নবরাত্রির মহা নবমীকে এবার খুব বিশেষ বলে মনে করা হচ্ছে কারণ এই দিনে বিশেষ যোগ তৈরি হচ্ছে। ৫ অক্টোবর,দশেরাতে দেবীকে বিসর্জন দিয়ে তাকে বিদায় দেওয়া জানানো হবে ।
পদ্মের উপর উপবিষ্ট দেবী সিদ্ধিদাত্রীর চারটি বাহু রয়েছে, যার মধ্যে গদা, পদ্ম, শঙ্খ এবং সুদর্শন চক্র রয়েছে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে মা দুর্গার নবম শক্তি দেবী সিদ্ধিদাত্রীকে পূর্ণ ভক্তি সহকারে পূজা করলে অণিমা, মহিমা, লঘিমা, প্রাপ্তি, প্রাকমি, ঈশিত্ত্বা, বশিতা ও কামবশয়িতা এই অষ্ট সিদ্ধি ও পদ্ম,মহাপদ্ম,নীল মুকুন্দ, নন্দ,মকর,কচ্ছপশঙ্খএবং খর্ব এই নব নিধি, বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা লাভ হয়। গন্ধর্ব, কিন্নর, নাগ, যক্ষ, দেব-দেবী এবং মানুষ সকলেই তাদের কৃপায় সিদ্ধি লাভ করেন।
মা সিদ্ধিদাত্রীকে দেবী হিসাবে বিবেচনা করা হয় যিনি তার নামে আটটি সিদ্ধি (অণিমা, মহিমা, গরিমা, লঘিমা, প্রপ্তি, প্রাকাম্য, ইশিত্ব এবং বশিত্ব) প্রদান করেন। নবরাত্রির নবমীর পূজায় দেবী সিদ্ধিদাত্রীকে নয়টি পদ্মফুল বা শুধুমাত্র চম্পা ফুল নিবেদন করা হয় । কন্যাভোজে তৈরি প্রসাদ নিবেদন করা হয় । চতুর্মুখী প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবীর মন্ত্রগুলি জপসহ আরতি করে ৯টি মেয়েকে যথাযথভাবে পূজা করা হয় । এর পরে, একটি শুভ সময়ে হবন করে নবমী তিথির শেষে উপবাস ভঙ্গ করা হয়।
মা সিদ্ধিদাত্রীর নৈবেদ্য ছোলা, পুরি, হালুয়া খুবই প্রিয়। নবমীর দিন মেয়েদের একই খাবার খাওয়ানো হয়। দেবীকে চম্পা, পদ্ম বা হিবিস্কাস ফুল নিবেদন করা হয় , এতে পরিবারে সুখ-শান্তি আসে।
নবরাত্রির মহানবমীতে মা সিদ্ধিদাত্রীর আরাধনায় গোলাপী রং অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। গোলাপী রঙ প্রেম এবং নারীত্বের প্রতীক।
মহানবমী দুর্গাপূজার অন্তিম দিন হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এবছর একই দিনে হবে বিসর্জনের পর্ব।