মিয়া মোহাম্মদ ছিদ্দিক, কটিয়াদী ( কিশোরগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
তীব্র দাবদাহ ও কাঠ ফাটা রোদে রাস্তার মোড়ে মাথায় হাত দিয়ে বসা এক রিকশা চালক। শরিল থেকে টপটপ করে ঘাম পড়ছে। বার বার মাথার ঘাম গামছা দিয়ে মুছবার চেষ্টা করছেন৷ গরমের কারণে রাস্তায় নেই তেমন মানুষ৷ কিন্তু রিকশার চালক গোলাপের মাথায় চিন্তার ভাজ। একদিকে রিকশার ভাড়ার চাপ আরেকদিকে সংসার চালানো। সবকিছু চিন্তা তাকে ঘিরে ধরেছে৷
দিনটা পার হলেই রিকশার ভাড়া দিতে হবে তিনশো টাকা৷ সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে দুপুর একটা পর্যন্ত তার উপার্জন মোট আশি টাকা৷ রাতে রিকশার মহাজনকে যেভাবেই হউক টাকা দিতেই হবে৷ চাই ইনকাম হউক বা নাই হউক। এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে গিয়ে বার বার কেঁদে ফেলেন তিনি।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পৌর বাজারে দেখা মিলেছে এমনি এক অসহায় দরিদ্র রিকশার চালকের৷ তার নাম গোলাপ মিয়া (৪০)। পাশ্ববর্তী নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার কৃষ্বপুর ইউপির পূর্ব বীরগাঁও গ্রামের মাঝি বাড়ির বাসিন্দা তিনি৷
এলাকাবাসী ও রিকশার চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্ত্রী দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার গোলাপ মিয়ার। মেয়ে এবার এইচএসসি পরিক্ষার্থী। বাকিরাও স্কুলে লেখাপড়া করছে৷ ছেলে মেয়েরা সবাই মেধাবী। লেখাপড়া করতে তারা খুবই আগ্রহী। তীব্র অভাব অনটনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন৷
এলাকাবাসী জানান, গোলাপ খুবই সহজ সরল ও পরিশ্রমী মানুষ। নিয়মিত নামাজ পড়েন। নিজস্ব থাকার কোন যায়গা নাই। আরেকজনের যায়গায় থাকে পরিবার নিয়ে। এলাকাবাসী মাঝে মধ্যে তাদের সহযোগিতা করেন। তাদের ছেলে মেয়েরা ভালো পড়াশোনায়৷ কিন্তু অভাবের কারণে খাবার জোটানো কঠিন। আবার লেখা পড়ার খরচ তাদের জন্য যুদ্ধ করার মতো কষ্ট হচ্ছে৷ তার নিজস্ব একটা গাড়ি হলে পরিবার নিয়ে উপার্জন করে চলতে পারতো৷
রিকশা চালক গোলাপ মিয়া বলেন, সংসার নিয়ে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছি৷ ভাত জোটানো যেখানে দায় সেখানে লেখাপড়া কিভাবে করাবো বলেন?। তবুও সন্তানের মুখের দিকে তাকালে মনডা মানে না আর৷ তাদের আবদার রাখতে পারিনা৷
তিনি আরো জানান, একটা আনলে আরেকটা বাকি থাকে৷ আমার নিজস্ব একটা রিকশা ছিলো পায়ে চালানোর৷ ২৬ বছর আগে চিকিৎসার খরচ আর তীব্র অভাবে বিক্রি করেছিলাম। পরে আর কিনার সাধ্য হয়নি। একটি অটোরিকশা হলে সংসারটা চালাতে পারতাম৷ বাড়িটাও ঝুপড়ি ঘর৷ বৃষ্টি আসলেই ভিজতে হয়৷ এভাবেই চলছি৷’