স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ
যশোরের দুঃখ ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জলাবদ্ধতা মানুষের অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ রবিবার (৬ই অক্টোবর) সকাল এগারোটায় ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বানে এ অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
‘পানি সরাও, মানুষ বাঁচাও’ স্লোগানে যশোরের জলাবদ্ধ ভবদহ অঞ্চলের দুই হাজারের বেশি নারী-পুরুষ জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
কাঁধে লাঙল, মই ও নিড়ানি, হাতে ছিল ‘পানি সরাও, মানুষ বাঁচাও’, ‘সেচ প্রকল্পে সমাধান হবে না, টিআরএম চালু করো’, ‘ভবদহ অঞ্চলকে দুর্গত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করতে হবে’, ‘ভবদহ গেট সংস্কার করে কপাট খুলে দাও, তুলে দাও’ প্রভৃতি প্ল্যাকার্ড নিয়ে দুপুর দুইটা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির (জাহিদ), কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালী, যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী আবদুল হামিদ, সদস্যসচিব চৈতন্য পাল, অনিল বিশ্বাস, কানু বিশ্বাস, হাবিবুর রহমান, তারক বিশ্বাস, আবদুল লতিফ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের যশোরের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি দিপঙ্কর দাস, বাসদ নেতা হাচিনুর রহমান, সিপিবি নেতা আমিনুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ভবদহ অঞ্চলের ১০টি উপজেলার ৪ শতাধিক গ্রাম জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়েছেন ১০ লক্ষাধিক মানুষ। সেচপাম্প দিয়ে ভবদহের পানি সরানো যাবে না। এ জন্য আমডাঙ্গা খালসহ সব খাল সংস্কার, নেটপাটা উচ্ছেদ ও পানিনিষ্কাশনের বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে হবে।
ভবদহ স্লুইসগেট থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীর মাঝে উঁচু স্থানগুলো দ্রুত ড্রেজিং করতে হবে। দ্রুত বিল কপালিয়াসহ বিলে বিলে জোয়ারাধার চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি ও বিপর্যয়ের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের বিচার করতে হবে।
কর্মসূচি থেকে জলাবদ্ধ এলাকা থেকে দ্রুত পানিনিষ্কাশন, জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে বিল কপালিয়াসহ বিলে বিলে টিআরএম(টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট) বা জোয়ারাধার চালুসহ ৪ দফা দাবি জানানো হয়।
কর্মসূচিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে ভবদহ অঞ্চল পরিদর্শন করে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার নাগাদ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও আইডব্লিউএমের (ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং) একটি দল ভবদহ অঞ্চলে যাবে।
তারা স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান কীভাবে করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা করবে। এরপর তিনি বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপন করবেন। তিনি বলেন, ‘এত দিন আমি আপনাদের সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। এখন দায়িত্ব আমার ওপরে বর্তেছে।
সমাধান যেন আপনাদের মতামতের ভিত্তিতে হয়, অবশ্যই সে বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব, তা সুনিশ্চিত করা হবে।এ সময় উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ পানি সম্পদ উপদেষ্টাকে ভবদহ এলাকার মানুষের খাদ্য সহায়তা, চিকিৎসা সহায়তাসহ এনজিও ও কৃষি লোন নিয়ে হয়রানি না করার জন্য অনুরোধ করলে তিনি বিষয়গুলো দেখার আশ্বাস দেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে ডিসি না আসায় তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন উপস্থিত এলাকাবাসী। পরে বেলা দেড়টার দিকে সেখানে আসেন ডিসি মো. আজাহারুল ইসলাম। এরপর তাঁর হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ। ডিসি জলাবদ্ধ মানুষের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দেন।