নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা দুই দিনের অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকার কারণে নেত্রকোণার কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধিতে নদীর তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলার প্রধান প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধির ফলে পানি দ্রুত নদীতে নামতে না পারায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। রাস্তা, মাঠ-ঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। স্কুল, মাদরাসা, ঘর-বাড়ির চারপাশেই পানি। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন মানুষের। অপরদিকে এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকট।
নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডে সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সোমেশ্বরী ও উব্দাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দুই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চাল প্লাবিত। রবিবার বিকেল ৩টার দিকে কলমাকান্দার উপজেলার প্রধান নদী উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমা ৬.৫৫মি. এর কাছাকাছি ৬.৫৪ মি. অর্থাৎ বিপদসীমার শূণ্য দশমিক শূণ্য এক মি. নিচে দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সকালের দিকে কলমাকান্দায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৭২ মিলিমিটার।
অন্যদিকে একই সময়ে সোমেশ্বরী নদীর দুর্গাপুর পয়েন্টে নাগাদ গেল ১৮ ঘণ্টায় ৫৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীটিতে গড়ে ঘণ্টায় সাড়ে তিন সেন্টিমিটার পানি বেড়ে চলছে।
ওজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় কলমাকান্দা উপজেলার নয়াপাড়া, মুক্তিচর, ধান মহাল, বিশরপাশা, বাউশাম, হরিপুর চকবাজার, আনন্দপুর, বরুয়াকোনা, রংছাতি পাকা সড়কের ওপর দিয়ে পানি বয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও কলমাকান্দা সদরসহ লেংগুরা, খারনৈ, রংছাতি নাজিরপুর, ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কের উপর দিয়ে পানি বয়ে যাচ্ছে। পানিবন্দি হয়েছে উপজেলার হাজারো মানুষ। পাশাপাশি তলিয়ে গেছে শতাধিক পুকুর, আউশ, রোপা,আমন ধানি ফসলসহ বীজতলা ।
অতি বর্ষণের কারণে কলমাকান্দার সীমান্তবর্তী উব্দাখালী নদীসহ গনেশ্বরী, মঙ্গলেশ্বরী, মহাদেও নদ, মহেষখলা নদী ও পাঁচগাও ছড়ায় পাহাড়ি ঢলের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে কলমাকান্দা সদরের সঙ্গে চারটি ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা। কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নের মুক্তিচর, নয়াপাড়া, ড্রেইনপাড়, চাঁনপুর, চান্দুয়াইল, সাউদপাড়া, শালজান, গুছাকুলিয়া, খাসপাড়া, চিনাহালা, নয়ানগর, নাগিনী চাকুমপাড়া, বিশরপাশা, খারনৈ ইউনিয়নের মেদিরকান্দা, রুদ্রনগর রামভদ্রপুর, রংছাতি ইউনিয়নের রামনাথপুর, বিশাউতি, রায়পুর, কৃষ্টপুর বরকান্দা, জঙ্গলবাড়িসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার কারণে পানিবন্দি হয়ে আছেন।
অপরদিকে দুর্গাপুর উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচ ইউনিয়নে পাহাড়ী ঢল নেমে নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৩০-৪০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সোমেশ্বরী ও পার্শ্ববর্তী নেতাই নদীর পানি প্রবেশ করে উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের জাগিরপাড়া, বন্দউষান, মুন্সিপাড়া, আটলা, পূর্বনন্দেরছটি, হাতিমারাকান্দা, ভাদুয়া, নাওধারা, দক্ষিন জাগিরপাড়া, অপরদিকে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বিলকাঁকড়াকান্দা, দৌলতপুর, পলাশগড়া, বংশীপাড়া, গাইমারা, কাকৈরগড়া ইউনিয়নের, গোদারিয়া, বিলাশপুর, লক্ষীপুর, রামবাড়ি, দুর্গাশ্রম এবং চন্দ্রিগড় ইউনিয়নের সাতাশি, চারিখাল, নীলাখালী, ফুলপুর এবং বাকলজোড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামসহ প্রায় ৪৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানি বন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছেন।
দুর্গাপুরের উপজেলা মৎস কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বলেন, পাহাড়ী ঢলে পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমান প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা।
দুর্গাপুরের উপজেলা কৃষি অফিসার নীপা বিশ্বাস বলেন, আমন ধান. মাশকলাই ও শীতকালীন সব্জির প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি নিমজ্জিত রয়েছে এরমধ্যে ছয় হাজার দুইশো হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দুই-একদিনের মধ্যে যদি পানি নেমে যায় তাহলে ক্ষতির পরিমান অনেকটাই কমে আসবে।
দুর্গাপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নিম্নাঞ্চলের অনেক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন খবর সব জায়গা থেকেই আসছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি ও গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন মানুষ। প্লাবিত এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকট রয়েছে। পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ ও আশ্রয় কেন্দ্র খোলার বিষয়ে দুপুরে জরুরি মিটিং ডাকা হয়েছে। সকল ক্ষেত্রেই উপজেলা প্রশাসন সজাগ রয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান বলেন, বৃষ্টি আর উজানের ঢলের পানিতে জেলার নদ-নদীর পানি বেড়ে চলেছে। গত রাতে উজানে বৃষ্টি হওয়ার কারনে সোমেশ্বরী, কংস, উব্ধাখালী ও নেতাই এসব নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধির পেলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত ও বন্যার শঙ্কা রয়েছে।