উজ্জ্বল রায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, নালিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,লোহাগড়া,নড়াইল
১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্ব ব্যাপী পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এই দিবসটি শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য পালন করা হয়। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়। বিশ্বের ১০০টি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ বিগত বছর থেকে দিবসটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশ সরকার’কে বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে দেরিতে হলেও শিক্ষকদের জন্য আলাদা একটি দিবস ঘোষণা করে উদযাপন করার জন্য। কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার জন্য চাই কাঙ্ক্ষিত শিক্ষক! শিক্ষা ও কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা দু’টি ভিন্ন শব্দ এবং আলাদা অর্থ বহন করে। পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও হাতে কলমে শেখা এবং সমাজ সভ্যতার বাস্তবতা থেকে কোনোকিছু শেখা-ই হলো শিক্ষা! আর কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা হলো সেই শিক্ষা যা রাষ্ট্র তাঁর ভৌগলিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটা নির্দিষ্ট মানদণ্ডের আলোকে অর্জিত হবে বলে নির্ধারন করে এবং তা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখে পরিশেষে তা অর্জিত হলে তবে সেটা-ই হয় কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা!! কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা বাস্তবায়নে প্রধান সহায়ক বা গুরুত্বপূর্ন উপকরণ হলো কাঙ্ক্ষিত শিক্ষক। শিক্ষক আর কাঙ্ক্ষিত শিক্ষক শব্দ দু’টিও ভিন্ন অর্থ বহন করে। শিক্ষক যে কেউ যেকোনো স্থান থেকে হতে পারে আর কাঙ্ক্ষিত শিক্ষক হলো রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট মানদন্ড ও যোগ্যতার আলোকে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা বাস্তবায়নে সহায়ক ব্যক্তি। কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার জন্য যেমন দরকার কাঙ্ক্ষিত শিক্ষক, তেমনি কাঙ্ক্ষিত শিক্ষকের প্রয়োজন কাঙ্ক্ষিত সম্মান ও সম্মানি! আজকের আধুনিক সমাজ বাস্তবতায় কাঙ্ক্ষিত শিক্ষকের বড়ই অভাব! কেননা, শিক্ষক আর আগের মতো করে সম্মানও পাই না সম্মানিও পাই না! অবশ্য আজকের এই অবস্থার জন্য শিক্ষকদের এককভাবে দায়ী করার সুযোগ নাই, কেননা কাঙ্ক্ষিত শিক্ষক নিয়োগের মতো মহান দায়িত্ব যারা পালন করেন তাদের কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা, স্বচ্ছতা, নিরেপেক্ষতা সহ যদি শতভাগ জবাবদিহিতা নিশ্চিত থাকে তবেই জাতি হিসেবে আমরা পেতে পারি কাঙ্ক্ষিত শিক্ষক! আজকাল কাঙ্ক্ষিত শিক্ষকের সংখ্যা একেবারের সীমিত হয়ে গেছে; এ দায় কার…!! বাস্তবতার নিরিখে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষক নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত সম্মানী নির্ধারণ একটা গুরুত্বপুর্ণ যোগ্যতা। আমি নিশ্চিত করে জানাতে চাই আমাদের দেশে শিক্ষকতা পেশায় যদি কাঙ্ক্ষিত সম্মানী নিশ্চিত থাকতো তাহলে আমদের দেশের মেধাবী যোগ্যতা সম্পন্ন প্রজন্মই তাদের কাঙ্ক্ষিত পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকেই বেছে নিতো এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা ভিন্ন, আমরা তথা আমাদের প্রজন্ম কাঙ্ক্ষিত পেশা না পেয়ে জীবন চালাতে বাস্তবতার নিরিখে কোনোকিছু করতে না পেরে শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নেই জীবিকা হিসেবে। ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্র তাঁর কাঙ্ক্ষিত শিক্ষক নির্বাচনে ব্যর্থ হয়!! আমাদের রাষ্ট্র যে পুরোপুরি ব্যর্থ তা কিন্তু বলছি না, কারন বর্তমান শিক্ষকদের মধ্যেও স্বল্পসংখ্যক কাঙ্ক্ষিত শিক্ষক আছে বলেই এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। তবে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা বাস্তবায়নে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে শিক্ষকদের কাঙ্ক্ষিত সম্মানী নিশ্চিতের মাধ্যমে।
শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর, জ্ঞানের ফেরিওয়ালা আর শিক্ষাকে যদি জাতির মেরুদণ্ড ধরা হয়, তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষকরা হলেন শিক্ষার মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ডহীন প্রাণী যেমন চলতে পারে না, তেমনি মেরুনন্ডহীন শিক্ষাও অকার্যকর। এই শব্দগুলো ধ্রুব সত্য কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো আজকাল এই শব্দগুলো কেন যেন বক্তৃতা বিবৃতির ভাষাতে যুক্ত হয়ে শ্রোতেদের রসদ জোগাতে সহায়তা করে। পেশা হিসেবে শিক্ষকতা একটি মহান সেবামূলক পেশা এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। আজকের সমাজ সভ্যতায় যখন মানুষের সম্মান ও মূল্য নির্ধারিত হয় অর্থে তখন শিক্ষকরা থাকেন সেখানে সমাজের পেছনের সারিতে! যা আমাকে শুধু হতাশ-ই করে না ভাবতেও শেখায় আগামী প্রজন্মের শিক্ষকদের সম্মানের দুর্ভিক্ষ নিয়ে! পরিশেষে বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৪ এ আমার স্বাধীন মতামত “কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার জন্য প্রয়োজন কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক; আর কাঙ্ক্ষিত শিক্ষকের জন্য অবশ্যই প্রয়োজন কাঙ্ক্ষিত সম্মানী”।