সাবেক নির্বাচন কমিশনার এবং দুই প্রধান সহকারীদের কোটি কাটার দুর্নীতি
সাবেক সচিব জাহাংগীর আলম, খোরশেদ আলম ও মনিরুজ্জামান তালুকদার
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের, সাবেক সচিব জনাব জাহাঙ্গীর আলম ঘনিষ্টজন জনাব মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার, যুগ্মসচিব (প্রশাসন ও অর্থ) ও জনাব খোরশেদ আলম, উপসচিব (জনবল ব্যবস্থাপনা) এই ২ জন জনবল নিয়োগকারী আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান নিয়োগ এর জন্য সাবেক সচিব, জনাব জাহাঙ্গীর আলম সাহেব প্রশাসনিক অনুমোদনের নামে এবং প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম নবায়নের জন্য কোটি কোটি টাকা আদায় করে সাবেক সচিব, জনাব জাহাঙ্গীর আলমকে ৫০% এবং বাকি অর্ধেক টাকা জনাব মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার, ও জনাব খোরশেদ আলমের মধ্যে ভাগাভাগি করতো এবং রাজস্ব নিয়োগে প্রক্রিয়াধীন জনবল জনাব মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার ও জনাব খোরশেদ আলম সিন্ডিকেট তৈরী করার চেষ্টা করছেন।
জনাব খোরশেদ আলমের নামে আরও অভিযোগ আছে যে, খোরশেদ আলম জেলা নির্বাচন অফিসার চট্রগ্রাম হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে রোহিঙ্গাদের অনৈতিকভাবে টাকার বিনিময়ে ভোটার করে এনআইডি পাইয়ে দিতে সহায়তা করতেন। এটা করার জন্য তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা রয়েছে এবং মামলাটি চলমান। তারপরও এই রকম জঘন্যতম অপরাধ ও দুনীতি করার পরও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সাবেক সচিব জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠ সহচর হওয়ায় জনবল অধিশাখার মত গুরুত্বপূর্ণ অধিশাখার উপসচিব হিসেবে পদায়ন রেখেছিলেন। মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আছে যে, যুগ্মসচিব মনিরুজ্জামান তালুকদার সাবেক সচিব জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠ সহচর । জাহাঙ্গীর যেখানেই পদায়ন হয়ে কাজ করেন সেখানে যুগ্মসচিব মো মনিরুজ্জামান তালুকদার কে সাথে নিয়ে তাকে দিয়ে সকল অবৈধ অর্থ লেনদেন ও অনৈতিক কাজ করে থাকে। জনাব মনিরুজ্জামান তালুকদার ২০১৮ সালে রাতের জাতীয় নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে মুন্সীগঞ্জে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের যুগ্মসচিব হিসেবে নির্বাচন কমিশনে জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে কাজ করেছেন । এছাড়াও জনাব সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচচিত করার নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার দায়িত্ব পালন করেছেন। ডামি নির্বাচনের অন্যতম কারিগর সাবেক সচিব জনাব জাহাঙ্গীর আলমের সহযোগী যুগ্মসচিব জনাব মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার। তিনি অর্থ ও প্রশাসনের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে এখনও ছড়ি ঘোরাচ্ছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের উপর এবং আওয়ামী লীগ স্বৈরশাসকের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছেন।
এমনি আমরা একটি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পেয়েছি, সাবেক সচিব জাহাঙ্গীর আলম সাহেব, সচিব দায়িত্বকালীন থাকা সময়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অধীনে ১০ টি অঞ্চলের জনবল নিয়োগের জন্য আঞ্চলিক কর্মকর্তারা দরপত্র আহব্বান করেন। প্রতিটি দরপত্রই সাবেক সচিব, জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে জনাব মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার ও জনাব খোরশেদ আলম প্রশাসনিক অনুমোদন ও কার্যাদেশ অনুমোদনের জন্য প্রতি প্রতিষ্ঠান থেকে ৪০-৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ বানিজ্য করেছেন এবং প্রতি প্রতিষ্ঠান নবায়নের জন্য ১০-২০ লক্ষ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন বলে জানা যায়।
আমরা সম্প্রতি উইডু এর নামের প্রতিষ্ঠানের মালিকের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম যে, উইডু ৩টি বিভাগে কাজ পেয়েছিলেন কিন্তু কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর সাবেক সচিব, জাহাঙ্গীর আলম উইডুর মালিক মোঃ আব্দুল আওয়াল হিমেল-কে বিশেষ বাহকের মাধ্যমে ডাকেন ও বলেন,”আপনি বিএনপির লোক এবং লুৎফর রহমান বাবর (সাবেক স্বরাষ্টমন্ত্রী) এর আত্বীয় হোন সুতরাং আপনাকে কাজ করতে হলে আমাদের শর্ত অনুসারে কাজ করতে হবে না হলে হবে না।” এই জন্য উইডু প্রতিষ্ঠানের মালিকের নিকট ৩ টি প্যাকেজের জন্য ১ কোটি টাকা দাবী করে বলেন যে, “জনাব মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার ও জনাব খোরশেদ আলমের কাছে পৌছে দিলেই আমি উক্ত টাকা পাব।”
উইডু টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের কার্যক্রমের নবায়ন দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখে এবং টাকা না দেওয়াই নবায়ন দেওয়া হয়নি এবং বাকি সকল বিভাগের নবায়ন দেওয়া হয়েছিল। কয়েকমাস পরে এর কারণ জানতে চেয়ে জনাব খোরশেদ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন যে, সচিব সাহেবের শর্তে রাজি থাকলে নবায়ন দেওয়া হবে অন্যথায় নাবয়ন করা হবেনা বলে জানায়। নবায়ন না পাওয়ার কারনে উইডু মহামান্য হাইকোর্টে ২টি রিট প্রিটিশন করেন এবং সাবেক সচিব ও জনাব মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার ও জনাব খোরশেদ আলম এই তিনজন কর্মকর্তারা হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে পূনরায় দরপত্র আহব্বানের অনুমতি প্রদান করেন এবং এই বিষয়ে ঢাকা জেলার দায়রা জর্জ আদালতে ২টি সিভিল মামলা চলমান রেখেই নতুন করে অর্থ আদায়ের জন্য জনাব মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার ও জনাব খোরশেদ আলম এবং ময়মনসিংহ ও সিলেটের বর্তমান আঞ্চলিক কর্মকর্তারা নতুন প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়া চলমান রেখেছেন।
একই ধারাবাহিকতায় রংপুর অঞ্চলে নতুন করে ঘুষ বানিজ্য করার জন্য পুনরায় নবায়ন না দিয়েই দরপত্র আহব্বান করলে টাকা পাওয়া যাবে সে জন্য দরপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া করতেছেন। উক্ত সময়ে জনাব মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার ও জনাব খোরশেদ আলমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় খুব্ধ হয়ে উইডু প্রতিষ্ঠানের ২টি কার্যাদেশ (ময়নসিংহ ও সিলেট) এর নবায়ন বাতিল করেন এবং অন্য ১টি (রংপুর) কার্যাদেশ বাতিল প্রক্রিয়াধীন। উইডু প্রতিষ্ঠানের মালিককে জিজ্ঞেস করলে বাতিলের কারন উল্লেখ করেছিল যে, কলকারখানা লাইসেন্স নবায়ন ছিলনা। সেই সময়ে এই লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়াধীন ছিল এবং এটি নিয়ে হাইকোর্টে ১টি মামলাও ছিল। নবায়ন সম্পূর্ন করে লিখিত ভাবে অবহিত করা হয়েছিল। অর্থাৎ নতুন করে দরপত্র আহব্বান করলে আবার টাকা পাওয়া যাবে এরকম দূর্নীতি প্রক্রিয়াটির প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন জনাব খোরশেদ আলম। উইডুকে কার্যাদেশ দেওয়া এই ৩টি দরপত্রের জন্য তৎকালীন ৩ জন REO কে উক্ত স্থান হতে বদলি করা হয়েছিল এবং তাদের পদন্নোতি স্থগিত করা হয়। সাবেক সচিব ও খোরশেদ আলম নতুন করে দরপত্র আহব্বান করে তার পছন্দের REO দের প্রেরন করে এবং সিভিলকোর্টে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ময়মনসিংহ ও সিলেটে দরপত্র আহব্বান করে প্রতিষ্ঠান নিয়োগের চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
উল্লেখ্য, ডামি নির্বাচনের কারিগর, নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমকে গত ১লা অক্টোবর গুলশান থেকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। জাহাঙ্গীর আলম এ বছরের ৭ জানুয়ারি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আছে যে, ডামি নির্বাচনের উপকরণ ক্রয়, অমুছনিয় কালি, সিল, ব্যালট বক্স, ব্যালট পেপার ক্রয় করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
উইডু প্রতিষ্ঠানের মালিক মোঃ আব্দুল আওাল হিমেলের সাথে অভিযোগের প্রত্যাশার ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এই বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাবেক সচিবসহ আরও নির্বাচন কমিশনের ৮ জনের নাম উল্লেখ করে চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন এর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করবো। সেখানেও যদি সুফল না পাই এবিষয়ে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করবো।”
এ বিষয়ে দ্যা মেইল বিডির প্রতিনিধি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সচিব শফিউল আজিম, যুগ্মসচিব জনাব মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার এবং উপসচিব জনাব খোরশেদ আলমের সাথে সরাসরি দেখা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে।