প্রথম ধাপে ১৮ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকায় সফররত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।
শুক্রবার বিকেলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান আনোয়ার ইব্রাহিম।
এর আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে একমত প্রকাশ করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সুখবর দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ওপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে আমার। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং সর্বাত্মক সহযোগী থাকবে।’
দেশটির শ্রমবাজার নিয়ে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, যেসব কর্মী মালয়েশিয়ায় ঝামেলায় পড়েছেন, প্রথম দফায় ১৮ হাজার ব্যক্তিকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছি। বাংলাদেশে যেসব মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাদেরও সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছি।
যৌথ বিবৃতিতে আনোয়ার ইব্রাহিম আরও বলেন, আমাদের দেশে আরও জনশক্তি প্রয়োজন, তবে উভয় দেশের মধ্যে শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা থাকতে হবে। এছাড়া সেমি-কন্ডাক্টর, ডেটা সেন্টার, এআই, নিউ টেকনলোজির বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি।
এ সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমার পুরনো বন্ধু এবং বাংলাদেশের পুরনো বন্ধু আসায় আমি খুবই খুশি। এরপর আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর এটা প্রথম কোনো সরকার প্রধানের বাংলাদেশ সফর।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছি। যেখানে তারুণ্যের শক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছি। সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।’
চতুর্থ ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয় এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনশক্তি রফতানি, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো নিয়ে কথা বলেছি। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি এবং ভিসা সহজীকরণের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।’
আসিয়ান জোটে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে মালয়েশিয়ার সক্রিয় সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
এর আগে শুক্রবার দুপুরে একদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় পৌঁছান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এর মধ্যদিয়ে প্রায় ১১ বছর পর মালয়েশিয়ার কোনো প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করলেন।
বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগতম জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের অন্যতম বড় ক্ষেত্র মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ২০০৯ সালে প্রথম দফায় বন্ধ হয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালের শেষে চালু হয় শ্রমবাজারটি। পরে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আবারও তা বন্ধ হয়ে যায়। ২০২২ সালে শ্রমবাজারটি আবার চালু হয়।
এই শ্রমবাজারে গত মে মাস পর্যন্ত প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী যান। যাওয়ার কথা ছিল আরও প্রায় ১৮ হাজারের। কিন্তু তারা মালয়েশিয়া সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা ৩১ মের মধ্যে উড়োজাহাজের টিকিট ও নিয়োগকর্তা থেকে প্রয়োজনীয় নথি নিতে ব্যর্থ হন। কিন্তু এদেশীয় এজেন্সি তাদের সেখানে পাঠাবে বলে নির্ধারিত অংকের চেয়েও অনেক বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়।
মালয়েশিয়ার উড়োজাহাজের টিকিট না পেয়ে ৩১ মে অনেক শ্রমিক বিমানবন্দরে পর্যন্ত ভিড় করেছিলেন। কিন্তু তারা যেতে পারেননি।