ইসরায়েলের সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইরান। এরপরই উত্তেজনা পৌঁছে গেছে চরমে। মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী হামলা চালানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এই হুঁশিয়ারির পর পাল্টা হামলার হুমকি দিয়েছে ইরানও। তেহরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যদি কোনও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেয়, তবে ইসরায়েলের সমস্ত অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাবে ইরান।
এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত সহজে থামছে না। ইসরায়েল নাকি ইরান, কে বেশি শক্তিশালী- সে প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে।
অত্যাধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তির দিক থেকে ইসরায়েল বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানও সামরিক প্রযুক্তিতে অনেক দূর এগিয়েছে। সামরিক সক্ষমতায় কোন দেশ কোন অবস্থানে রয়েছে, তার পরিসংখ্যান তুলে ধরে ‘গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার’ ওয়েবসাইট। ফায়ার পাওয়ার সূচকে ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরানের অবস্থান ১৪তম আর ইসরায়েলের অবস্থান ১৭তম।
নিচে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ইরান ও ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতা :
ইরান বনাম ইসরায়েল : আন্তর্জাতিক সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষণ ওয়েবসাইট গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের চেয়ে সামরিক শক্তিতে কিছুটা এগিয়ে ইরান। ফায়ার পাওয়ার সূচকে ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরানের অবস্থান ১৪তম আর ইসরায়েলের অবস্থান ১৭তম।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্সের ২০১৯ সালের হিসাব যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখা যাবে বিশ্বে সামরিক অস্ত্রের সক্ষমতার দিক থেকে ইরান এই ১৪ নম্বরে আছে কয়েক বছর ধরেই। বরং ইসরায়েলের অবস্থান কিছুটা এগিয়েছে। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েল ছিল ১৮ নম্বরে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা পেয়ে প্রতিনিয়নত নিজেদের সক্ষমতার উন্নয়ন করেছে ইসরায়েল।
হালনাগাদ হিসাব অনুযায়ী, নিয়মিত সেনার সংখ্যা, সামরিক উড়োজাহাজ, পরিবহন উড়োজাহাজ, সাঁজোয়া ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান, সাবমেরিন ও যুদ্ধজাহাজের সংখ্যায় ইসরায়েলের তুলনায় বেশ এগিয়ে ইরান। আবার রিজার্ভ সেনা, যুদ্ধবিমান, হামলায় ব্যবহৃত হেলিকপ্টার ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এগিয়ে আছে ইসরায়েল।
নিয়মিত সেনাতেও ইসরায়েলের চেয়ে অনেক এগিয়ে ইরান। ইরানের যেখানে নিয়মিত সেনার সংখ্যা ৬ লাখ ১০ হাজার, সেখানে ইসরায়েলের ১ লাখ ৭০ হাজার।। তবে রিজার্ভ সেনা ইসরায়েলের কাছে বেশি।
ইসরায়েলের কাছে ইরানের চেয়ে দ্বিগুণ যুদ্ধবিমান রয়েছে। ইসরায়েলের কাছে যুদ্ধবিমান রয়েছে ২৪১টি। ইরানের কাছে রয়েছে ১১৬টি। ইরানের চেয়ে হামলায় ব্যবহৃত হেলিকপ্টারের সংখ্যা ইসরায়েলের বেশি। ইরানের এমন হেলিকপ্টার আছে ১৩টি। ওইদিকে ইসরায়েলের আছে ৪৮টি। অবশ্য ট্যাঙ্ক বেশি আছে ইরানের। দেশটির ট্যাঙ্কের সংখ্যা ১ হাজার ৯৯৬টি। ইসরায়েলের কাছে আছে ১ হাজার ৩৭০টি। ইসরায়েলের চেয়ে ২০ হাজারের বেশি সাঁজোয়া যানও আছে ইরান।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, ইসরায়েলের যুদ্ধাস্ত্রের বেশির ভাগই সর্বাধুনিক। তবে ইরানের এক্ষেত্রে নিজস্ব প্রযুক্তি ও রাশিয়া–চীনের কিছুটা সহায়তাই ভরসা। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে অস্ত্র ও সামরিক প্রযুক্তি কেনার বিষয়টি কঠিন হয়ে যায় ইরানের। আর ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় পড়ার পর থেকে তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তবে ইরান বসে থাকেনি। নিজেদের সামর্থ্যেই সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে ইরান সফলও হয়েছে বেশ।
অর্থাৎ, পশ্চিমা উন্নত যুদ্ধব্যবস্থাকে হিসাবে নিলে ইসরায়েল বেশ ভালো অবস্থানে আছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ইসরায়েল অনেক এগিয়ে। আর এই ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থা খানিকটা নাজুকই বলা চলে। যদিও কাসেম সোলাইমানির মৃত্যুর পর এই খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে ইরান।
ইরানের মূল শক্তি কীসে : পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে সমীহ করা হয় মূলত একটি অস্ত্রের কারণে। সেটি হলো ক্ষেপণাস্ত্র। নিজেদের সামর্থ্যেই এমন সব ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে ফেলেছে ইরান, যেগুলোর কারণে ইসরায়েলসহ অন্যান্য বিরোধী রাষ্ট্রের ইরানকে ভয় না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। যুদ্ধবিমানের সংখ্যা কম থাকায় আকাশপথে শত্রুকে লন্ডভন্ড করা ইরানের পক্ষে কঠিন। ওপরে ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধবিমানের সংখ্যা দেখলেও সেটা বোঝা সহজ। তাই পরিকল্পিতভাবেই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা শক্তিশালী করায় মনোযোগ দেয় ইরান।
দেশটির অন্যতম বিরোধী শক্তি হলো যুক্তরাষ্ট্র। সেই মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের দেওয়া তথ্যই বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষেপণাস্ত্রের সবচেয়ে বড় মজুত আছে ইরানের। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালকের অফিস বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল আছে কেবল ইরানেরই।
খুব নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে না পারলেও এসব মিসাইল বিক্ষিপ্তভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সক্ষম। এটা অনেকটা আমেরিকান স্টাইলে ব্রাশফায়ার করার মতো বিষয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইসরায়েল, সৌদি আরবসহ পারস্য অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় আছে। ফলে শত্রুপক্ষের ক্ষয়ক্ষতি সাধনের ক্ষমতা ইরানের ভালোই আছে। আর এটাই বিরোধীপক্ষের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলতে যথেষ্ট।
ইরান ও ইসরায়েলের কার কত সামরিক শক্তি?
নিয়মিত সেনা :
ইরান: ৬ লাখ ১০ হাজার
ইসরায়েল: ১ লাখ ৭০ হাজার
রিজার্ভ সেনা :
ইরান: ৩ লাখ ৫০ হাজার
ইসরায়েল: ৪ লাখ ৬৫ হাজার
আধাসামরিক বাহিনী :
ইরান: ২ লাখ ২০ হাজার
ইসরায়েল: ৩৫ হাজার
মোট সামরিক উড়োজাহাজ :
ইরান: ৫৫১টি
ইসরায়েল: ৬১২টি
যুদ্ধবিমান :
ইরান: ১১৬টি
ইসরায়েল: ২৪১টি
হামলায় ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান :
ইরান: ২৩টি
ইসরায়েল: ৩৯টি
পরিবহন উড়োজাহাজ :
ইরান: ৮৬টি
ইসরায়েল: ১২টি
হেলিকপ্টার :
ইরান: ১২৯টি
ইসরায়েল: ১৪৬টি
হামলায় ব্যবহৃত হেলিকপ্টার :
ইরান: ১৩টি
ইসরায়েল: ৪৮টি
ট্যাংক :
ইরান: ১ হাজার ৯৯৬টি
ইসরায়েল: ১ হাজার ৩৭০টি
সাঁজোয়া যান :
ইরান: ৬৫ হাজার ৭৬৫টি
ইসরায়েল: ৪৩ হাজার ৪০৩টি
যুদ্ধজাহাজ (ফ্লিট) :
ইরান: ১০১টি
ইসরায়েল: ৬৭টি
সাবমেরিন :
ইরান: ১৯টি
ইসরায়েল: ৫টি
সূত্র : গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার।