রুহুল আমিন,ডিমলা(নীলফামারী)
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখরিবাড়ি ইউনিয়নের চর খড়িবাড়ি এলাকার জোসনা আক্তারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার প্রতিবাদ ও এই ঘটনায় জড়িতদের সকলের বিচার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী ও স্বজনরা।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫ টার দিকে ডিমলা উপজেলার টেপাখরিবাড়ি ইউনিয়নের চর খড়িবাড়ি এলাকার একতার বাজারে এই মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী ও স্বজনেরা।
নিহত জোসনা আক্তারের স্বজন ও এলাকাবাসীরা মানববন্ধনে বলেন, জোসনাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেন তাঁর স্বামী জাহিদ সহ শ্বশুরবাড়ির পরিবারের লোকজন। স্বজনদের দাবী জোসনার স্বামী তার নিজের বউকে অন্য মানুষ দ্বারা নির্যাতন করতো। তাঁর কান কাটা হয়েছে, আমরা যাতে চিনতে না পারি সেজন্য মুখে এসিড মারা হয়েছে, এরপর পাষণ্ড স্বামী হাত বেধে তিস্তা নদীতে ফেলে দিয়েছিল। হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত সবার দ্রুত গ্রেপ্তারসহ প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন এলাকাবাসী ও স্বজনরা।
মানববন্ধনে জোসনার দাদা নূর ইসলাম কান্নায় ভেঙে পড়েন। চোখে পানি বুকে ব্যথা নিয়ে বলেন, আমি ২ তারিখে আমার নাতীনের বিয়া দিয়েছি ১৯ দিন পর আমার নাতিনের মরা লাশ আদীতমারী থানা থেকে উদ্ধার করলাম। আমাদের ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। জাহিদ একাই আমার নাতীনকে হত্যা করেনি, এর সাথে আরো অনেক খুনি লুকিয়ে আছে । আমার দাবী আমার কলিজার টুকরা নাতীনরে যে হত্যা করেছে তার আমি ফাঁসি চাই। আমার দাবী একটাই আমার নাতীন হত্যার ফাঁসি চাই।
সন্তান হারিয়ে নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জোসনার মা বলেন, আমার সন্তান কে কী তারা ফিরাই দিতে পারবো, আমি খুনি জাহিদের ফাঁসি চাই।
জোসনার ফুফু বুলবুলি আক্তার চোখের পানি মুছতে মুছতে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমাদের অনেক আদরের ছিলো আমাদের কলিজার ধন, তারে হত্যা করে আসে বলে আপনাদের জোসনা আর কোনোদিন আসবে না। আমরা একসাথে বিয়া বাড়িতে আসছিলাম বিয়া খাইতে, অনেকক্ষণ ধরে ফোন দিচ্ছিলো আমার ভাতিজি বলে তোমার জামাই অনেকবার ফোন দিতেছে তার আইডি কার্ড নিয়ে যেতে বলতেছে। আমরা আবার জিজ্ঞাসা করি তার আইডি কার্ড কেন তোমার কাছে, সে বলে হয়তো ব্যাগে রেখে দিয়েছে। এর পর আবার হয়তো ফোন দিয়েছে মেয়ে আমাদেরকে না বলে একাই চলে গেছে। তাকে নিয়ে গিয়ে যে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করবে এটা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।
কান্না করতে করতে মেয়ের চাচী হাসিনা বেগম বলেন, আমার নিষ্পাপ মেয়ে, আমার মেয়ে কোন ভুল করতে পারেনা, ওরা আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে আমি আমার এই হত্যার বিচার চাই । ফাঁসি চাই, এই খুনি জাহিদের ফাঁসি চাই। আমার মেয়ের জীবন নিয়েছে সে তারও আমরা জীবন চাই। আমরা কিছু চাইনা ওই খুনি জাহিদের ফাঁসি চাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম রব্বানী বলেন, আপনারা দেখেন আমার ৪নং ওয়ার্ড বাসী হাজার হাজার মানুষ একতা হয়েছে আমাদের সকলের একটাই দাবী এই জোসনা হত্যার ফাঁসি চাই। মেয়েটি হারানো পর অনেক চিন্তায় ছিলাম এলাকাবাসী, সর্বশেষ আমরা তিস্তা নদীর মধ্যে লাশ পেয়েছি। এরই মধ্যে পুলিশের কাছ তার স্বামী স্বীকার করেছে যে সে তার স্ত্রীকে নিজেই হত্যা করেছিল। কিন্তু আমার মনে হয় তার স্বামী একাই এতবড় কাজ করতে পারেনা । এর সাথে আরো যারা জড়িত আছে আমরা তাদের গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছি এবং এই হত্যাকারী জাহিদের ফাঁসি চাই আমাদের আর কোন দাবী নাই। দাবী একটাই হত্যাকারী জাহিদের ফাঁসি চাই।
স্থানীয় বাসিন্দা ইউসুফ ইসলাম বলেন, আমাদের ছোট্ট আদরের জোসনা, বিয়ের ১৯ দিনের মধ্যে সংসার জীবনটা কী সেটিই তো সে বুজতে পারলো না। তার কী এমন অপরাধ যে তাকে এমন নির্মম ভাবে হত্যা করতে হবে।তার স্বামীর পরিকল্পনা দেখেন আমাদের ডিমলা থানার মেয়ে তাকে লালমনিরহাট মহিপুর ব্রিজে নিয়ে গিয়ে নদীতে ফালানো হয় তাহলে তাদের কী এই ঘটনা পরিকল্পিত না । তাদের এই ঘটনা সাজানো কী না আপনারই বলেন। আমাদের দাবি এই হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
এই সময়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি সহ কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এই সময়ে উপস্থিত সবাই এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে অতি দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দাবি করেন।
গত ২২ সেপ্টেম্বর সকালে পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় বালুর বাঁধ এলাকার তিস্তা নদীর চর থেকে জোসনার মরদেহ উদ্ধার করে আদিতমারি থানা পুলিশ।
ডিমলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) ফজলে এলাহী বলেন, চাঞ্চল্যকর জোসনা হত্যা মামলায়, জোসানা বিয়ের ২০ দিন পর লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থানার তিস্তার চড়ে জোসনার লাশ পাওয়া যায়। আমাদের থানায় মামলা করা হলে আমরা তার স্বামীকে গ্রেফতার করি এবং ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর সে স্বীকার করেছে যে তার স্ত্রীকে সে হত্যা করেছে এবং বিজ্ঞ আদালতেও সে স্বীকার করে হত্যার কথা। এই ঘটনার সাথে আরো কেউ জড়িত ছিলো কী না আমরা গভীর তদন্ত করে দ্রুত তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসবো।