রুহুল আমিন, ডিমলা (নীলফামারী)
উজানে পাহাড়ি ঢল ও কয়দিনের ভারী বর্ষণের পর তিস্তা নদীর পানি কমছে। এতে তিস্তার বাসিন্দারা স্বস্তি ফিরে পেলেও নদী ভাঙনের আশঙ্কায় দিশেহারা তারা। রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে আজ সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৫২ দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এর আগে গতরাত সাড়ে ১২টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার যা বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে তিস্তার পানি কমায় ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ী, পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রামসহ পানিবন্দি নিম্নাঞ্চলের প্রায় কয়েক হাজার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ছোট খাতা টি বাঁধের বেশ কিছু স্থানে ধ্বস দেখা দিয়েছে। তিস্তাপারের চর ও নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০শত মানুষ। আগাম শীতকালীন সবজি, বোরো ফসলের ক্ষেত ও চলাচলের সড়ক। ভেসে গেছে মাছের পুকুর-খামার। অনেকে গবাদিপশু নিয়েও নিদারুন বিপাকে পড়েছেন। এছাড়াও টানা বৃষ্টিপাতে পানি বাড়ার ফলে উপজেলার সব নদ-নদীর পানির পাশাপাশি বিলের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে। এতে রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম জানান, আজ সকাল ৯টা থেকে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এর আগে গতরাত ১১টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপৎসীমার দশমিক ২ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া আপাতত বন্যার আশঙ্কা নেই।
বাইশ পুকুর এলাকার মমিনুর রহমান (২৭) বলেন, রাতে পানি বৃদ্ধি পর আমাদের বাড়িতে পানি উঠেছে। সকাল থেকে কিছুটা পানি কমতে শুরু করেছে। নদীর তীরবর্তী এলাকায় যেখানে ধ্বস সৃষ্টি হয়েছে দ্রুত সংস্কার করতে হবে। তাছাড়া ভাঙ্গন তৈরি হবে। বর্তমানে ভাঙ্গন আতঙ্কে সময় পার করছি।
উপজেলার চরখড়িবাড়ী এলাকার রিয়াজুল ইসলাম (২৭) বলেন, সকাল থেকেই কমতে শুরু করেছে তিস্তা নদীর পানি।উজানের বাঁধগুলো বালু দিয়ে নির্মাণ করায় কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিলে গ্রামবাসী নিজেরাই তা মেরামত করে। পানি কমার সাথে সাথে বাঁধ সংস্কার করা না হলে বড় ধরনের ভাঙ্গনের কবলে পড়তে পারে।
ছোটখাতা এলাকার মাজেদুল ইসলাম (২৭) বলেন, বৃষ্টির কারণে বাঁধ ধ্বসে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বাঁধ সংস্কার না করলে ভাঙ্গন আরো বড় আকারে রূপ নিতে পারে।
১০ নং পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল লতিফ খান বলেন, ঝাড়সিংহেশ্বর ও পূর্ব ছাতনাই মৌজার ৬টি ওয়ার্ডের প্রায় ১৩শত পরিবার পানি বন্দি রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ৭নং খালিশা চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সহিদুজ্জামান সরকার বলেন, বাইশ পুকুর এলাকায় প্রায় ৪ শতাধিক বাড়িঘরের পানি উঠেছে।নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। সেই সঙ্গে ফসলি জমিতে পানি ওঠায় নষ্ট হচ্ছে আগাম শীতকালীন শাকসবজি ও আবাদি বিভিন্ন ফসল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। সকাল থেকে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও রাত ১১টার দিকে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
ত্রাণ সহায়তার আশ্বাস দিয়ে নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, তিস্তার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে রয়েছে। আমরা খোঁজখবর রাখছি। উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সার্বিক দেখভাল করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।