রুহুল আমিন,ডিমলা(নীলফামারী)
উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে ফের বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি। পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। যা বর্তমানে বিপদ সীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফলে উত্তরের জনপথ নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশা চাপানি ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হচ্ছে। আর এতে তলিয়ে গেছে পাকা ধান, সবজি ক্ষেতসহ আবাদি জমি। আর ভাঙ্গন আতঙ্কে পড়েছে তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার। স্বাভাবিক পানির প্রবাহ (৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) যা বিপদ সীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে অব্যাহত রয়েছে তিস্তার পানির বৃদ্ধি।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র ও চরবাসীরা জানান, ভারতের সিকিমে উৎপত্তি স্থল থেকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদীর পানি এবং তা হু-হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নদীর বাংলাদেশ অংশের উজানে গজলডোবা বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা নদীর পানি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। বর্ষাকালে ভারত পূর্ব সতর্কীকরণ ছাড়াই অতিরিক্ত পানি ফারাক্কা গেট খুলে বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেওয়া হয়। একইভাবে শুষ্ক মৌসুমে গেট বন্ধ করে তিস্তার পানি একক ব্যবহার করছে তারা।
বর্ষাকাল শুরু হওয়ায় উজানে ভারতে বৃষ্টিপাতের অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই উজানের ঢলে তিস্তার পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েক দিনের টানা ভারি বৃষ্টিপাত। ফলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমা ছুঁই ছুঁই করছে। আর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বর্ষাকাল শুরু হলেই বাংলাদেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্তৃপক্ষ।
টাপুরচর এলাকার কৃষক ফরিজল হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানি সঙ্গে উজান থেকে হু হু করে আসছে পানি। বন্যা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কিছু কিছু এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। গবাদি পশুপাখি আর শিশু বয়োবৃদ্ধদের নিয়ে বর্ষাকালে কষ্ট হয়।
ছোট খাতা গ্রামের শামীম আহমেদ বলেন, ইতিপূর্বে আমার দুই বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। বাকি যেটুকু আছে সেটা আর এই বন্যায় থাকবে না।
খালিশা চাপানি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান বলেন, আমার ইউনিয়নের ৫টি ওয়ার্ড তিস্তা নদীর তীরে। বন্যা হলেই এ ওয়ার্ডের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। পানি বাড়ায় ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
তিস্তা ব্যারাজ বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় ছিলো ৩২ সেন্টিমিটার নিচে। এরপর রাত ৯ টায় ছিলো ১৫ সেন্টিমিটার নিচে। রাত ৯ টার পর থেকে পানির প্রবাহ বাড়তে থাকে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আবহাওয়া অধিদপ্তর। বিষয়টি নিশ্চিত করেন পানি পরিমাপক মো. নুরুল ইসলাম।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাশেদীন বলেন, তিস্তার পানি ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। উজন থেকে নেমে আসা পানি ও অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে।তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই।