নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোণার মদনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়ার বিরুদ্ধে জলমহাল থেকে আদায় করা রাজস্ব আত্মসাৎসহ নানা অনিয়েমের অভিযোগ উঠেছে। এমন বিষয়ে নেত্রকোণা জেলা প্রশাসকের কাছে দায়ের করেন মদনের গোবিন্দ্রশ্রী গ্রামের মৃত সুলতু মিয়ার ছেলে খাইরুল ইসলাম।
মঙ্গলবার বিকেলে অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করেন নেত্রকোণার নবাগত জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস। এরআগে গত ৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগকারী ইউএনও’র বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অভিযোগ জমা দেন।
খাইরুল ইসলাম তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, ইউএনও মো. শাহ আলম মিয়া চাকুরি বিধি লঙ্গন করে একচ্ছত্র আধিপত্ত ও প্রভাব বিস্তার করে থাকেন। ১৪৩০ বঙ্গাব্দে উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের চাওয়াই নদীর খাস কালেকশনের নামে সাত লাখ পঞ্চাশ হাজার আদায় করেন। এর বিপরীতে ইজারাদারকে কোন খাজনা রশিদ দেননি। সেই টাকা সরকারী কোষাগারেও জমা করেননি। একই গ্রামের চাড়িয়া বিলের দরপত্রের ইজারা প্রক্রিয়া বাতিল করে উন্মোক্ত খাস কালেকশনে দেন এবং বিধি ভঙ্গ করে গোপনে একটি পক্ষের কাছ থেকে চার লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা আদায়ের চার লাখ টাকা নিজে আত্মসাৎ করে নাম মাত্র কিছু টাকা সরকারী কোষাগারে জমা করেন ইউএনও।
উন্মোক্ত খাস কালেকশনের মাধ্যমে উপজেলার বাস্তা গ্রামের হেরন বিল তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ইজারার এই টাকাও তিনি আত্মসাৎ করেন এবং কৌশলে ইজারাদারকে দিয়ে ফিশিং না করার অজুহাতে স্যালেন্ডার করান। ধলাই নদীর ফতেপুরের অংশ দুই লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে ফিশিংয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন। এছাড়াও উপজেলার প্রত্যেক জলমহালের ইজারাদারের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে সেচ যন্ত্র দিয়ে পানি শুকিয়ে মাছ ধরার সুযোগ করে দেন। বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁকে জানানো হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি ইউএনও।
অভিযোগে আরও উল্লেখ, ইউএনও মো. শাহ আলম মিয়া মদন উপজেলা যোগদানের পুর্বে নরসিংদী এ্যাসিল্যান্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঘুষ বাণিজ্যের জন্য নরসিন্দী এলাকার থেকে মাইন উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসেন মদনে। তিনি তাকে খালাতো ভাই হিসাবে পরিচয় দেন। মাইন উদ্দিন নরসিংদীর আনসার বিডিবি’র বিডিবিতে চাকুরি করতেন। তার মাধ্যমেই ইউএনও সকল ঘুষ বাণিজ্যের লেনদেন করতেন।
ইউএনও মো. শাহ আলম মিয়া’র নানা দুর্নীতির মধ্যে আরও উল্লেখযোগ্য কিছু তথ্য তোলে ধরেন অভিযোগকারী। তাহলো- বিভিন্ন গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন, মেরামত ও সংস্কার (টিআর,কাবিখা) প্রকল্প থেকে ইউএনও ১০ শতাংশ উৎকোচ নিতেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফসল রক্ষার বাঁধের পিআইসির (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) কাছ থেকে আট শতাংশ ঘুষ নেন। এরআগে তার বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে নয় ছয় করার বিষয়ে সংবাদও প্রচার হয়েছে গণমাধ্যমে। এরকম নানান বিষয়ে অভিযোগ আনয়ন করেন অভিযোগকারী।
এ বিষয়ে মদনের ইউএনও শাহ আলম মিয়ার সরকারি মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তার বক্তব্যের জন্য হোয়াটস অ্যাপ মেসেঞ্জারে ও সরকারি ইমেইলে অভিযোগের কপি প্রেরণ করা হয়। কিন্তু তাতেও সাড়া মেলেনি।
নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, অভিযোগের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।