ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার টেকসই মানোন্নয়নে বিভিন্ন সমস্যা দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন সদর হাসপাতাল কেন্দ্রিক অ্যাকটিভ সিটিজেন্স গ্রুপ (এসিজি)।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে অধিপরামর্শ সভায় এই আহ্বান জানানো হয়।

এসময় হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. শামীম আহমেদ, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. টি. এম. মেহেদী হাসান সানী উপস্থিত ছিলেন।

টিআইবি’র এরিয়া কোঅর্ডিনেটর মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় সদর হাসপাতাল কেন্দ্রিক অ্যাক্টিভ সিটিজেন্স গ্রুপের সমন্বয়ক আরিফুর রহমান রায়হান, সহ সমন্বয়ক আরিফ সরদার, সুমাইয়া আক্তার, সুব্রত সাহা, নুসরাত জাহান বৃষ্টি, ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপের দলনেতা রিমন মাহমুদ, সহ. দলনেতা তামান্না ইসলাম, মো. শাহরিয়া পাপন, সাথি আক্তার, আরিফুল ইসলাম আকাশ ও টিআইবি’র কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।

সভায় অ্যাকটিভ সিটিজেন্স গ্রুপের (এসিজি) সদস্যরা জানান, ইতোপূর্বে হাসপাতালের কিছু সমস্যা দূর হলেও বেশিরভাগ সমস্যা এখনও বিদ্যমান থাকায় স্বাস্থ্য সেবার মান নিয়ে সাধারণ জনগণের অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমস্যাগুলো সমাধানে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তারা। যেসকল সমস্যা স্থানীয়ভাবে সমাধান করা সম্ভব নয়, তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নিতেও আহ্বান জানান এসিজি সদস্যরা। এর আগে এসিজি সদস্যরা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র বিশেষায়িত মোবাইলভিত্তিক এপস্ (প্যাক্ট্যাপ) এর মাধ্যমে হাসপাতালে কমিউনিটি মনিটরিং এ প্রাপ্ত তথ্য লিপিবদ্ধ করেন। এবং হাসপাতালের সেবাগ্রহীতাসহ স্থানীয় জনসাধারনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত কমিউনিটি অ্যাকশন মিটিং-এ প্রাপ্ত বিভিন্ন সমস্যাগুলোর সুনির্দিষ্ট তথ্য লিপিবদ্ধ করেন।

উভয় সূত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত সমস্যাগুলোর তথ্য অধিপরামর্শ সভায় তুলে ধরে তা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ি অধিপরামর্শ সভায় হাসপাতালের যেসব সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়েছে, তাহলো- ১. দৃশ্যমান স্থানে হালনাগাদ তথ্য না থাকা (চার্জের সময়সূচী, ডাক্তার এবং নার্সদের ডিউটি রোস্টার, খাবারের মেনু, পরিদর্শনের সময়, অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা, ওষুধের তালিকা, অভিযোগ প্রতিকার পদ্ধতি ইত্যাদি); ২. হাসপাতালে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা বন্ধ থাকা বা অপ্রতুল পরিষেবা (এক্স-রে / ইসিজি / আল্ট্রা-সনোগ্রাফি / ডেন্টাল /প্যাথলজি ইত্যাদি); ৩. শিশু বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, দন্ত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শুন্য পদ পূরণ না হওয়া; ৪. ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের নির্ধারিত সময়ে হাসপাতালে উপস্থিত না থাকা; ৫. প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো; ৬. রোগীদেরকে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার/ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া; ৭. নার্স ও স্টাফদের অসদাচরণ/দুর্ব্যবহার; ৮. ওষুধ বিতরণে অনিয়ম; ৯. দালালদের দ্বারা হয়রানি; ১০. রশিদবিহীন টাকা লেনদেন; ১১. বেদে সম্প্রদায়সহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবায় বৈষম্য করা; ১২. হুইলচেয়ার এবং ট্রলির অপ্রতুলতা; ১৩. লোডশেডিংয়ের সময় ব্যাকআপ পাওয়ার (জেনেরেটর) সাপোর্ট না থাকা; ১৪. সিসি ক্যামেরা সচল না থাকা ইত্যাদি।

সভায় সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. শামীম আহমেদ হাসপাতালের চিকিৎসার যন্ত্রপাতি মেরামত করতে দেরী করার কারণ জানতে তাৎক্ষনিকভাবে ইঞ্জিনিয়ারসহ সংশ্লিষ্টদেরকে ফোন করেন। তত্বাবধায়ক হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে ডেকে এসিজি সদস্যদের উপস্থাপিত হাসপাতালের সমস্যাগুলো সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। হাসপাতালে সকল ধরণের অনিয়ম বন্ধে সকল বিভাগে নোটিশ জারির নির্দেশ প্রদান করেন তিনি। পরবর্তীতে কারও বিরুদ্ধে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে সতর্ক করেন তত্বাবধায়ক।

তত্বাবধায়ক ডা. শামীম আহমেদ এসিজি সদস্যদেরকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘হাসপাতালের সেবার টেকসই মানোন্নয়নে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এবং যেসকল ঘাটতি রয়েছে তা উত্তোরণে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version