বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি :-
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ফার্মেসি বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আলী খান।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টায় শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিভাগটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।
এদিন বিকেলে বিভাগটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের বিভাগ থেকে আন্দোলন শুরু করে প্রশাসনিক ভবনে যান এবং সেখানে আন্দোলন শুরু করে। তারা সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. মোঃ মোবারক হোসেনকে কিছু সময় অবরুদ্ধও করে রাখেন। পরে তিনি তার শারীরিক অসুস্থতার কথা শিক্ষার্থীদের জানালে শিক্ষার্থীরা তাকে যেতে দেন। তার কিছু সময় পর বিভাগটির চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের পর শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনর সমাপ্তি ঘোষণা করে প্রশাসনিক ভবন ছেড়ে যান।
তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিলো, ২০২৩ সালের ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল বিভাগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর ফলে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ফার্মেসি বিভাগে আর ভর্তি কার্যক্রম চালানো যাবে না। বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা না থাকায় এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, ল্যাব এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করলেও চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আলী খান কোনো উদ্যোগ নেননি। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্যও তিনি কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেননি, যার ফলে দেশের শীর্ষ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সিভি গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেছে।
অভিযোগের তালিকা এখানেই শেষ নয়। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ফার্মেসি বিভাগের একজন ম্যামের রুমে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে যেখানে অন্য শিক্ষকদের রুমে এই ধরনের কোনো নজরদারি নেই। যেখানে ক্লাসরুমের ফ্যানগুলো নষ্ট থাকলেও বিভাগীয় ফান্ড থেকে তা মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না সেখানে সিসি ক্যামেরা সবসময় চালু রাখা হয়।
শিক্ষক সংকটও একটি বড় সমস্যা হিসেবে উঠে এসেছে। ২০১৭ সাল থেকে মাত্র ২ জন পার্টটাইম শিক্ষক দিয়ে পুরো বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হলেও, গত মাসে বিনা নোটিশে তাদের ক্লাস ও পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় চরম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
এছাড়াও, শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন যে, চূড়ান্ত পরীক্ষায় মার্ক টেম্পারিংয়ের অভিযোগ থাকলেও চেয়ারম্যান ড. আলী খান কোনো পদক্ষেপ নেননি। প্রতিটি সেমিস্টারে ১৩০০ টাকা উন্নয়ন ফি নেওয়া হলেও এর কোনো কার্যকরী উন্নয়ন দেখা যায়নি এবং ফার্মেসি অ্যাসোসিয়েশন কার্যত বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে।
ইন্টার্নশিপ নিয়ে শিক্ষার্থীরা আরও জানান, চেয়ারম্যান বিভাগের দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ ম্যানেজ করতে সহায়তা করেননি। শিক্ষার্থীরা যখন নিজ উদ্যোগে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করে, তখনও অনুমতি পেতে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। যারা বিভাগীয় রেফারেন্সে ইন্টার্নশিপ করতে চেয়েছিলেন, তারাও সঠিক গাইডলাইন বা সহায়তা পাননি।
ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যানের পদত্যাগের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে উপ-রেজিস্ট্রার মোঃ মোরাদ হোসেন বলেন,”তিনি আমাদের রেজিস্ট্রার দপ্তরে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। নতুন চেয়ারম্যানের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিভাগের শিক্ষার্থীরা এসেছিলো আমরা বলেছি মুখে না বলে একটা লিখিত আবেদন দেন রেজিস্ট্রার বরাবর।”