কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে টিলা ধস। ভারী বৃষ্টির ফলে কমলগঞ্জের খাসিয়া পল্লির বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন ।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) ভোরে উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কালেঞ্জি খাসিয়া পল্লিতে টিলা ধসে দু’টি ঘর উপর থেকে নিচে ধসে পড়ে যায়। সেই থেকেই আতঙ্কে দিন পার করছেন খাসিয়ারা। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় ঝুকিঁপুর্ণ ১০টি পরিবাকে অন্যত্র সরানো হয়েছে।
জানাযায়, মঙ্গলবার ভোরে আদমপুর ইউনিয়নের কালেঞ্জি খাসিয়া পল্লিতে টিলা ধসে নাইট কেলক্রাম ও মুতলং খাসিয়ার দুটি ঘর উপর থেকে ধসে নিচে পড়ে যায়।
পরিবারের লোকজন দ্রুত সরে যাওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ঝুকিঁপূর্ণ ১০টি পরিবাকে অন্যত্র সরিয়ে নেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এরপর থেকেই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন খাসিয়া পল্লির মানুষজন।
বৃহত্তর সিলেট আধিবাসী ফোরামের কো চেয়ারপার্সন ও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান জিডিশন প্রধান সুচিয়াং জানান ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে পুঞ্জিতে টিলা ধসের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া কুরমা পুঞ্জির কিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন,ভারী বৃষ্টির ফলে টিলা ধসে পড়ে দুটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত ও চারটি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পুঞ্জির ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া হয়েছে।কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়নাল আবেদীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
অপরদিকে টানা মুষলধারে বৃষ্টির কারণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের একাধিক স্থানে ভাঙ্গনের ফলে দেখা দিয়েছে বন্যা পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
কয়েকদিনের টানা বর্ষনে ধলই নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মঙ্গলবার সকালের দিকে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়ন এর কুরমাঘাট চেক পোস্ট এলাকায় দুটি জায়গায় ভাঙন দেয়, এর পর দুপুরের শামসুর দোকান ও মকাবিল
এলাকায় আরো দুটি ভাঙন দিলে মুহূর্তেই ইসলামপুর ও আদমপুর এ দুটি ইউনিয়নের শ্রীপুর,কোনাগাঁও, গঙ্গানগর, গোলের হাওর,দক্ষিন গোলের হাওর, কুরমাঘাট, ভান্ডারিগাঁও, বনগাঁও, মধ্যভাগসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে হাজারো পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়ে। এছাড়াও মাধবপুর ইউনিয়নের ছয়ছিড়ি,বাঘবাড়ি, মাঝেরগাঁও,ধলাইপাড়, মাধবপুর চা বাগান,মদনমোহন চা বাগান সহ বেশ কয়টি এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়ে।
এছাড়াও বেশ কয়েকটি এলাকায় রাস্তার ওপর দিয়ে পানি উপছে পড়ে সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়। নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসলি জমি সহ মানুষ জন পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে।
কিছু কিছু এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা শুকনো খাবার বিতরণ করেন ,এছাড়া বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আদমপুর ও মাধবপুরের বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে শুকনো খবার বিতরণ করেন।
ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের মাধবপুর ইউনিয়নের হিরামতি,পাঠনিকোণা, আদমপুর ইউনিয়ন এর কাটাবিল, মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সুরানন্দপুর, লক্ষিপুর, চৈত্রঘাট ও রহিমপুর ইউনিয়নের শ্যামেরকোনা ও ছয়কুট,কমলগঞ্জ পৌরসভার কুমড়াকাপন, উজিরপুর, আলেপুর, নরেন্দ্রপুর ও রামপাশা, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ, নারায়নপুর, রামপুর, রানীরবাজার এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিব আহমেদ বলেন, ধলাই নদীর পানি বুধবার(২১ আগস্ট) বিকাল ৩টায় বিপদ সীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান পানি কমে আসলে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙ্গন এরিয়া ও ঝুঁকিপুর্ণ স্থান বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে দ্রুত মেরামত করা হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন,ধলাই নদীর আকস্মিক পানি বেড়ে গিয়ে ইসলামপুরে কয়েকটি জায়গায় ভাঙ্গন দেখা দিয়ে ইসলামপুর ও আদমপুর ইউনিয়ন এ বেশ কয়েকটি গ্রামে প্লাবিত হয়ে মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে।
আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছি, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট পর্যাপ্ত পরিমাণ রয়েছে।শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।