মোঃ মহিবুল ইসলাম , পাথরঘাটা (বরগুনা)
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বরগুনা জেলার সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মনি দীর্ঘ ১৮ বছর পর ঢাকা থেকে নিজ নির্বাচনী এলাকা বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগী) ফিরছেন।
নিজের বাড়িতে আসতে চেয়ে আওয়ামী লীগের হামলা, লাঞ্চিত এবং গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং তাকে ডুকতে দেয়া হয়নি।
সোমবার দুপুর ১টার দিকে সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মনি নয়া দিগন্তকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, তিনি আগামী বুধবার পাথরঘাটায় আসছেন।
এর আগে, রোববার বিকেলে নুরুল ইসলাম মনির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি বার্তা দিয়ে একটি ছবি শেয়ার করেন।
নিজ নির্বাচনী এলাকা ফেরার খবরে নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইতে শুরু হয়ে গেছে। তাকে বরণ করার জন্য পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপি প্রস্তুত রয়েছেন বলেও জানা গেছে।
আগেও ২০১৬ সালে নুরুল ইসলাম মনির ভাইয়ের মৃত্যুতে তার লাশ নিয়ে ফিরলেও তিনি সময় দিতে পারেননি।
জানা গেছে, নুরুল ইসলাম মনি ১৯৮৮, ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বরগুনা-২ আসন থেকে তিনবার নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েও নির্বাচিত হন। পরে এরশাদ সরকারের পতন হলে ১৯৯০ সালে সংসদ ভেঙে যায়।
পরে ১৯৯১ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। তিনি সে নির্বাচনেও জয়লাভ করেন। পরবর্তীতে তৎকালীন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকা নির্বাচনের পর তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। তিনি বরগুনা জেলা বিএনপির সভাপতিও নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রয়ারির অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। পরে ২০০১ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পরেই নুরুল ইসলাম মনিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলা দিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে বিতারিত করে রাখেন আওয়ামী লীগ।
এর পরে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর জন্য নিজ নির্বাচনী এলাকায় আসতে চাইলে উপজেলার সিঅ্যান্ডবি এলাকায় আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতৃত্ব প্রতিহত করে এবং সেখানে শারিরীক লাঞ্চিত করে এলাকা থেকে বের করে দেন। এর পরে তিনি-সহ ৪০০ বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।
এ ব্যাপারে নুরুল ইসলাম মনি জানান, ‘দীর্ঘ দিনের আওয়ামী লীগের দুর্শাসনের হাত থেকে আমার মানুষগুলো আজ মুক্তি পেয়েছে। আমারা সোনার দেশ আওয়ামী লীগের হয়রানি এবং চাদাবাজী থেকে রক্ষা পেয়েছে। এখন মানুষ খুব উৎফুল্ল হয়েছে। আমি আগে থেকেই সকলকে ধৈর্য ধারন করতে বলেছিলাম। আমরা আজ সবাই স্বাধীন।’
তার এলাকার মানুষের জন্য অবদানের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘এই অঞ্চলের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে আমার উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। স্কুল-কলেজ-মাদরাসাসহ সকল স্থানই উন্নয়ন হয়েছে আমার জন্য আর আমিই করেছি। এছাড়া গত ১৭ বছরে আর কোনো উন্নয়ন হয়নি বা চোখে পরার মতো নেই।’
পাথরঘাটা পৌর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন কাজী জানান, ‘দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে মেধাবী ছাত্র জনতা আন্দোলন করতে গিয়ে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে এই স্বৈরাচার সরকারের হাতে। সরকার পতনের পর পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগীর গর্ব সাবেক সংসদ সদস্য ও বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম মনি নিজ নির্বাচনী এলাকায় ফিরেছেন। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে।’
তিনি আরো বলেন, দেশবাসী এবং শিক্ষার্থীদের কাছে চির কৃতজ্ঞতা যে এই জালিম সরকারের পতন হয়েছে। বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম মনি পাথরঘাটায় ফিরে আসার খবরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
এখন বিএনপির হালধরে দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানান।’
পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চৌধুরী মো: ফারুক জানান, ‘মনি ভাইয়ের এলাকায় ফেরার খবরে নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ ও উচ্ছাসিত মনে হচ্ছে। তাকে বরণ করে নেয়ার জন্য পাথরঘাটাবাসী প্রস্তুত রয়েছে।’