তাসলিমুল হাসান সিয়াম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ছাড়ার পর গাইবান্ধার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাসহ ইউনিয়ন পর্যায়ের কয়েক শতাধিক নেতা কর্মীরা ঘর বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।
আত্মগোপনে যাওয়া এসব নেতাদের মধ্যে কয়েকজন সংসদ সদস্য , উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দলীয় শীর্ষ পদধারী নেতারাও রয়েছে।
দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে গত ৫ ই আগষ্ট দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রকাশ হওয়ার পর পরেই জেলা জুড়ে আনন্দ মিছিল বের করে হাজারো ছাত্র জনতা। এর মধ্যেই জেলা ও উপজেলা শহরের বেশ কয়েকজন আ’লীগ নেতা কর্মীদের বাস ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করেন দুর্বৃত্তরা। ফলে আ’লীগ নেতা কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি সঞ্চার হওয়ায় তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন।
সরেজমিনে গতকাল গাইবান্ধার বেশ কয়েকজন আ’লীগ নেতাদের বাসায় গিয়ে তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এছাড়া আত্নগোপনে থাকা নেতা কর্মীদের ব্যাবহৃত মোবাইল ফোনগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। তাদের প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে অধিকাংশ নেতা কর্মীরা পরিবার সহ আত্মগোপন করেন।
সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা। গাইবান্ধা সদর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের এক আ’লীগ মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে জানান, আমারা ক্ষমতাসীন হয়েও তৃণমূল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা কোন সুবিধা ভোগ করিনি, কারও অন্যায় করিনি , একটি কুচক্রী মহল আমাদের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালিয়ে আসছে ।
হামলাকারীদের রোষানলে পড়েছে মুক্তিযোদ্ধারাও । গত দুই দিনে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার বাসায় হামলা ও লুটপাট করা হয়। গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, আলী আকবর মিঞা বলেন, গত ৫ ই আগষ্ট বিকেলে অর্ধশতাধিক দুর্বৃত্ত আমার বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে । আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এদিকে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনীর কর্মবিরতির কারণে জন নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে । গত তিন দিনের বেশি সময় ধরে গাইবান্ধার সাত থানার প্রধান ফটক বন্ধ রেখেছে পুলিশ এতে বেড়েছে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার প্রবণতা ।
গাইবান্ধার বিশিষ্ট কয়েকজন নাগরিকদের দাবি, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা একটানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় জেলার শীর্ষ পদে থাকা বেশ কয়েকজন নেতা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছিল। সাধারণ মানুষের সাথে হয়রানি মূলক আচারণের কারনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পরেই বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছে। তবে বিক্ষোভটি যেন সহিংসতায় রুপ না নেয় সেদিকে খেয়াল রাখতে বলেন তারা ।
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক বলেন, আমরা প্রতিশোধ পরায়ণ না হয়ে সাম্যের রাজনীতি চাই । দমন পীড়ন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির আদর্শ পরিপন্থী। আমরা দেশের সকল নাগরিকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুন্দর দেশ তৈরি করতে চাই। এসময় তিনি তার দলের নেতাকর্মীদের সংযত আচরণ করতে বলেন।