মনিরুজ্জামান খান, গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে গরুর “ল্যাম্পি স্কিন” রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন পশু মালিকরা। গত এক মাসে প্রায় অর্ধলাখ গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়। তার মধ্যে শতাধিক পশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।সোমবার (৫ আগস্ট ) সরেজমিনে গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকার গরু মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ গরুর চামড়ার বিভিন্ন স্থানে ফুলে চাকা-চাকা হয়। গরুর শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুখে লালা থাকে এবং প্রচুর মাছি পড়তে থাকে গরুর গায়ে। ইতোমধ্যে পলাশবাড়ী উপজেলা মনোহরপুর ইউনিয়নের ঘোড়াবান্ধা গ্রামের লেবু সরকার,আব্দুস সোবহান শেখ,শাহজাহান সরকারের গরুসহ অনেকের গরু মারা গেছে।আরেক গৃহস্থ মনোহরপুর ইউনিয়ন ঘোড়াবান্ধা গ্রামের মাজেদা বেগমের বাছুর ল্যাম্পি রোগে আক্রান্ত হয়েছে বিভিন্ন চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছে ৪ হাজার টাকা, গরুর পালন করেই পরিবারের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে । পাশের বাড়ি মোস্তাফা কিছুদিন আগে একটি বিদেশী জাতের গরু ল্যাম্পি রোগে মারা গেছে। এটির দাম প্রায় দের লাখ টাকা। চৌধুরী বাড়ির ফরহাদ কয়েক দিন আগেই তার গরু মারা যায়।
এদিকে,গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নের মিয়াবাড়ি টিপু মিয়া(৬৫) জানান তার গরু ল্যাম্পি রোগে আক্রান্ত হলে স্থানীয় ভাবে পল্লী চিকিৎসক দ্বারা
৩ হাজার টাকা খরচ করে গরু ভালো হয়।
নাওভাঙ্গা গ্রামের কৃষক সেকেন্দার শেখ (৭০) জানান বড়দহ ব্রিজের নিচ দিয়ে মরা গরু ভাসমান অবস্থায় প্রায়ই দেখা যায়।
ইতোমধ্যে, এ রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। প্রায় দুই বছর ধরে ল্যাম্পি রোগটি দেখা দেয়। এনিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পশুর মালিকও খামারিরা। স্থানীয় পশু চিকিৎসকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,বন্যার পরেই এ বছরে হঠাৎ করেই জুন থেকে জুলাই মাসে এই রোগে গরু আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। আক্রান্ত গরুগুলোকে যত্নসহকারে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একইসাথে এ রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে গরুর মালিকদের নানান পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আতঙ্কিত হওয়া বা ভয়ের কোনো কারণ নেই।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়,জুন থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ১৬ হাজার ৩৮৪ গরু ল্যাম্পি রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ৭৫টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত ৮৩৭৫ গরু,চিকিৎসা দিয়েছেন ৮৩৭৫টি গরুকে ,আর টিকা প্রদান করেন ৪৭০০,
ফ্রি ভেটেরিনারি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা হয় ৩৩টি,ও উঠান বৈঠক করেন খামারিদের সাথে ৩৮টি,জনপ্রতিনিধি ওমিডিয়া প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ২২টি,লিফলেট বিতরণ করেন ১০৫০০ জন গরু লালন-পালনকারীর মাঝে।
গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহফুজার রহমান জানান, গরুর “ল্যাম্পি স্কিন” রোগ প্রতিরোধে মাঠে কাজ করা হচ্ছে। খামারি ও সাধারণ গৃহস্থদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উঠান বৈঠক, সভা, লিফলেট বিতরণ এবং চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।এছাড়াও উপজেলা প্রশাসন ও এফএও এর সহযোগিতায় ৩০৫০ জনকে ৫০ কেজি গোখাদ্য ও ১টি সাইলো এবং ৩৮৬ জনকে ১০ কেজি কর গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।