দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

‘এমন জীবন তুমি করিবে গঠন/মরণে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভুবন’

আজ ৯ জুলাই, ২০২৪ খ্রি. বীরমুক্তিযোদ্ধা এলএসি হেলালুজ্জামান বীরপ্রতীক এঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছরের ঠিক এইদিনে ভোর ৪:৫০ ঘটিকায় ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য মো. হেলালুজ্জামানকে “বীরপ্রতীক” খেতাবে ভূষিত করা হয়, যা তাঁর বীরত্ব এবং আত্মত্যাগের চিরন্তন স্বীকৃতি। তাঁর বীরত্বের কাহিনী এত অল্প সময়ে তুলে ধরা সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর জীবন বাজি রাখা অসামান্য অবদান শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত গৌরব গাঁথা নয়। বরং নেত্রকোনা তথা সমগ্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে কর্মরত অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করায় তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হলে তিনি পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সুইসাইড স্কোয়াডে যোগদান করেন।

এই বীরযোদ্ধা শেরপুরস্থ কামালপুরের যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ও অসামান্য সাহসিকতার জন্য বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত হন। তার বীরপ্রতীক গেজেট নং- ৫৪০।

পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি যমুনা অয়েল কোম্পানিতে যোগদান করেন এবং চাকুরির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে, ধর্মীয় কাজে এবং মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন।

মো. হেলালুজ্জামান ১৯৪৭ সালের ১ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানায় এক বনেদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মো. হেলালুজ্জামান ঢাকাস্থ বিমান বাহিনী ঘাটিতে প্রকৌশল শাখায় কর্মরত থাকা অবস্থায়, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনার জন্য কর্মস্থলে প্রচারণা চালানোর অপরাধে কালো তালিকাভুক্ত হন। পরবর্তিতে সুযোগ বুঝে তিনি কর্মস্থল থেকে পালিয়ে নারায়ণগঞ্জ চলে যান।

২৫ মার্চ পাক বাহিনীর ক্র্যাকডাউন শুরু হলে তিনি পালিয়ে ভারতের মেঘালয়ে যান। পরে মুক্তিবাহিনীর কার্যক্রম শুরু হলে তিনি মাহেন্দ্রগঞ্জ সাব-সেক্টরে প্লাটুন কমান্ডর হিসাবে যুদ্ধ করেন। ১১ নম্বর সেক্টরের কামালপুরে হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটিছিল। আগস্ট মাসে সেক্টর কমান্ডার আবু তাহেরের নেতৃত্বে তাঁরা হিট এন্ড রান পদ্ধতিতে এ ক্যাম্পটি আক্রমণ করে।

অন্য গ্রুপগুলো নিরাপদ স্থানে চলে গেলেও সবচেয়ে বিপদজ্জনক পাঁচ নম্বর বাংকারটি আক্রমণ করতে গিয়ে হেলালুজ্জামানের দলটি পাকবাহিনীর ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে যায়। মৃত্যু নিশ্চিত জেনে ও হালকা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তিনি শত্রু বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হন। একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা হত্যা করেন হানাদার বাহিনীর বেশ কয়জন সৈন্যকে। পরবর্তিতে মুক্তিবাহিনীরঅন্যদল গুলো সাহায্যে এগিয়ে এলে তারা পাল্টা আক্রমণে যান এবং হানাদার বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করেন।

একাত্তরের নভেম্বর মাসে মেজর আবু তাহেরের নেতৃত্বে পুনরায় তারা কামালপুর আক্রমণে যান, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় যখন প্রায় নিশ্চিত তখন শত্রুর গোলার আঘাতে মেজর তাহের আহত হলে মুক্তিবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে মো. হেলালুজ্জামানের এই অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ রাষ্ট্র তাঁকে ‘বীরপ্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করেন।

২০২৩ সালের ৩০ মে ভারতীয় দূতবাসের আমন্ত্রনে সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার সময় আকস্মিক ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৩ সালের ৯ জুলাই পরলোক গমন করেন। তাঁর শেষ যাত্রায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করে সম্মানিত করা হয়। যা তাঁর জীবনের দেশপ্রেম এবং বীরত্বের প্রতি এক গভীর শ্রদ্ধা। দেশের পতাকা জড়ানো কফিন এবং বিমানবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের সম্মান তাঁর প্রতি দেশের অঙ্গীকার ও কৃতজ্ঞতার নিদর্শন।

বিমানবাহিনী কর্তৃক মরহুম বীরপ্রতীক ও হিরো অব বিএফ-কে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করার প্রাক্কালে গার্ড অব অনার প্রদান

মো. হেলালুজ্জামান নেত্রকোনা জেলার অন্যতম কয়েকজন খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার একজন। তাঁর দেশ প্রেম, আদর্শ, ত্যাগ ও বীরত্বের গৌরবময় স্মৃতি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক চিরন্তন অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবন সংগ্রাম ও দেশের প্রতি অবিচল মমত্ববোধ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। বীরমুক্তিযোদ্ধা এলএসি হেলালুজ্জামান বীরপ্রতীকের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সেই সাথে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছে । মহান আল্লাহ তাআলা তাঁকে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন (আমিন)।

মো. হেলালুজ্জামান এঁর দেশ প্রেমের দৃষ্টান্ত এবং মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদান স্মৃতিতে চিরজাগরুক রাখার প্রত্যাশায় পরিবারের পক্ষ থেকে নেত্রকোনাবাসীর কাছে ও নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ও মেয়র মহোদয়ের কাছে নেত্রকোনা জেলা সদরের কুড়পারস্থ কাইলাটি জেলখানা সড়কটি “বীরপ্রতীক হেলালুজ্জামান সড়ক” নামে নামকরন করার জোর আবেদন জানানো হয়েছে।

আগামী ১৯ জুলাই শুক্রবার তাঁর স্মরণে নিজ শহর নেত্রকোনা জেলায় জেলা মুক্তিযুদ্ধ কমান্ডার কাউন্সিল এর আয়োজনে আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2024 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version