মনিরুজ্জামান খান গাইবান্ধা:
গাইবান্ধার চারটি উপজেলার প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।বন্যায় প্লাবিত তাদের বসবাড়ি। ঘরের ভেতরে জমেছে কোমর পানি। এই পানির ওপর নির্ঘুম রাত কাটছিল তাদের। জহুরা,সাইদুল পানি ভেঙে ছুটছে আশ্রয়ের ঠিকানায়।সেই সাথে ঘরবাড়ি নিয়ে নৌকা করে নিরাপদে ছুটছেন বানভাসি মানুষ গুলো।
গাইবান্ধায় ৪ উপজেলায় পানিবন্দী ৩০ হাজাররেও অধিক মানুষ।নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বানভাসি মানুষগুলো?
এরই মধ্যে বন্যার আরও অবনতি হওয়ায় এখন তারা স্থানীয় বেড়িবাঁধসহ আত্মীয়দের কাছে ঠাঁই নিবেন বলে জানান বন্যা দুর্গত এই মানুষরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইবান্ধা জেলার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, যমুনা, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারি, কামারজানি, মোল্লারচর, ঘাগোয়া, ও ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি, ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার লালচামার, চর কাপাসিয়া, কালাইসোতা, সিঙ্গিজানী, ভোরের পাখি, যুগিরভিটা, কাজিয়ার চর, বাদামের চর,উজানবুড়াইল, বোচাগারী, ভাটিবুড়াইল, কেরানীরচর, পোড়ারচর, তারাপুর, হরিপুর ইউনিয়ন ও সাঘাটা উপজেলা ভরতখালী ও হলদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষরা বিভিন্ন বাঁধ ও স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।
বিদ্যামান পরিস্থিতিতে জেলার চরাঞ্চলের রাস্তাঘাটসহ বাড়ি-ডুবে গেছে। অনেক ফসল পানি নিচে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার পানিবন্দি মানুষরা গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন। তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট। সেইসঙ্গে নদী ও বাঁধেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় ইতোমধ্যে শত প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুয়ায়ী, গাইবান্ধা সদরে ২টি, সুন্দরগঞ্জ ৭টি, সাঘাটা ৮টি ও ফুলছড়ি ৭টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ছে। এসব মানুষের জন্য ১৮১টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। সেইসঙ্গে শুকনা খাবার, জিআর চাল, জিআর ক্যাশ মজুদ রয়েছে। ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌকা, স্পিড বোট প্রস্তুত রয়েছে। ইউনিয়ন ভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রচার-প্রচারণা চলমান রয়েছে।
জুমারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, এ ইউনিয়নের বেঙ্গারপাড়া, থৈকরেরপাড়া, পূর্ব আমদিরপাড়া, কাঠুর, চান্দপাড়া, কুন্দপাড়া, বসন্তেরপাড়াসহ ৭ গ্রামে ৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, গাইবান্ধায় সবগুলো নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সব ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুতি নিয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল মিয়া বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী এবং শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল জানান, ইতোমধ্যে বন্যার্থ এলাকা সমুহ পরিদর্শন করা হচ্ছে। বন্যা মোকাবিলায় সব ধরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।