আরিফ শেখ, রংপুর প্রতিনিধিঃ
৪ বছর আগে সরকারি ঘর পেয়েছেন পুতুল ও বাবলু দম্পত্তি । ২ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দিন পার করছিল সেই ঘরে । কিন্তু গেল কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে সরকারের দেওয়া ওই ঘরটি । ঘরের চারপাশে পার্শ্ববর্তী যমুনেশ্বরী নদীর প্রাবাহমান হাঁটু থেকে কোমর সমান পানির কারণে দুর্ভোগ নেমে এসেছে তাদের জীবনে । বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়ে স্কুলের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছে তারা ।
বাঁশের তৈরি পণ্য বিক্রি করে কোন রকম সংসার চালায় তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর বড়গোলা পাটনি সম্প্রদায়ের পুতুলের স্বামী বাবলু । পুতুলও হাত লাগায় সেই কাজে । মোট ৪ জনের ভূমিহীন সংসারে আশার আলো ছড়াচ্ছে তাদের দুই সন্তান । আগে অন্যের জমিতে থাকলেও এখন সরকারি ঘরে থাকছেন ও জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন । কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ পানিবন্দী হয়ে যেন থমকে যায় জীবন ! পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ও শাপ-পোকামাকড়ের ভয়ে রান্নার চুলা, কাপড়চোপড় রাখার বাক্স , ভাঙাচোরা আলমিরা, থালাবাটি-বাসনকোসন নিয়ে দুই তিন দিন থেকে বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী বড়গোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বারান্দায় রাত্রি যাপন করতে হচ্ছে সপরিবারে ।
পুতুল জানান, জায়গাটি উঁচু না করে ঘর তৈরি করা হয়েছে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টির পানিতে আমরা পানিবন্দী হয়ে পরি। সপরিবারে স্কুলের খোলা বারান্দায় ৩ দিন থেকে আছি । আমাদের দেখার কেউ নেই। প্রায় প্রতি রাত্রে প্রচণ্ড শব্দ আর ঝর বৃষ্টি হচ্ছে , সবটুকুই যেন আমাদের মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে । না সরকারি ঘরে থাকতে পারছি , না স্কুলের ঘরে , তাই স্কুলের বারান্দায় কোন রকম ঘুমাই ।
পুতুলের স্বামী বাবলু জানান, সবচেয়ে বড় সমস্যা হল খাবার আর পানির । এই পানিবন্দী অবস্থা শুরু হয়েছে থেকে কোন কাজকর্ম করতে পারছিনা । ফলে পরিবারের জন্য এক মুঠো ভাত জোগাড় করা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে । স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান কোন সহযোগিতা করেছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কেউ এসে আমাদের খোঁজ নেয়নি ।
কুর্শা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফজালুল হক সরকার জানান, আমি খবর পেয়েছি । আজকেই ওই পানিবন্দী পরিবারের সাথে দেখা করব ।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ জিন্নাতুল ইসলাম জানান, সরেজমিনে খোঁজখবর নেওয়া হবে । সম্ভব হলে ওই পরিবারকে আমরা উপজেলা যাচাইবাছাই কমিটির মাধ্যমে নতুন ঘরে স্থানান্তর করে দেবো ।