দেওয়ান রানা, মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধিঃ
হাজারো মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে নিজ উপজেলা থেকে চির বিদায় নিলেন ৯০ এর ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপ-কমিটির সাবেক সহসম্পাদক শফী আহমেদ। বুধবার ( ৫ জুন) সকাল সাড়ে ১০ টায় মদন উপজেলা পাবলিক মাঠে চতুর্থ জানাজা শেষে নিজ উপজেলা থেকে তাকে চির বিদায় জানান হাজারো জনতা। পরে নেত্রকোনা শহরে বাবা মা এর কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। সোমবার (৩ জুন) তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা উত্তরায় ৭ নম্বর সেক্টরে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে শফী আহমেদের দ্বিতীয় জানাজা হয়। পরে সাড়ে ১১টায় তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নিয়ে গেলে সেখানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ফুল দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তারপর মরদেহ তাঁর নিজ জেলা নেত্রকোনায় আনা হয়। সন্ধ্যায় নেত্রকোনায় তাঁর তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় শফী আহমেদের মরদেহ নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়ার বাসায় নেওয়া হয়। পরে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে মোক্তারপাড়া মাঠে জেলার বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ফুল দিয়ে প্রয়াত শফী আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় শফী আহমেদকে নিয়ে কথা বলেন নেত্রকোনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. আশরাফ আলী খান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অসিত সরকার, পৌরসভার মেয়র মো. নজরুল ইসলাম খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শামছুর রহমান প্রমুখ। এরপর জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টায় শফী আহমেদের নিজ উপজেলা মদনে চতুর্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে প্রিয় নেতা শফী আহমেদ কে বিদায় জানান হাজার হাজার জনতা।
শফী আহমেদের চাচাতো ভাই নেত্রকোনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রবিউল আওয়াল জানান, ‘চতুর্থ জানাজা শেষে নেত্রকোনা শহরে তার বাবা মা এর কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়েছে।’
স্থানীয় ও আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম এই নেতাকে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির ঘোষিত নির্বাচনে নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরি) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়।
কিন্তু রাজনৈতিক সংঘাতের মুখে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর সেই নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়। এরপর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে শফী আহমদকে না দিয়ে প্রয়াত খাদ্যমন্ত্রী আবদুল মমিনের স্ত্রী রেবেকা মমিনকে দেওয়া হয়। টানা তিনবার রেবেকা আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হন। গত ১১ জুলাই রেবেকা মমিন অসুস্থ হয়ে মারা যান।
এরপর উপনির্বাচনের শফী আহমেদ দলীয় মনোনয়ন পত্র কিনলেও তাঁকে না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব সাজ্জাদুল হাসানকে দেওয়া হয়। দ্বাদশ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয় বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্রজমা দিলে দৈবচয়ন পদ্ধতির মাধ্যমে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
মৃত্যুকালে শফী আহমেদ দুই ছেলে, স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর ছেলেরা যথাক্রমে কানাডা ও লন্ডনে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে অবস্থান করছেন। আর স্ত্রী বাংলাদেশ বিমানের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। শফী আহমেদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার মদন উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নের মাখনা গ্রামে। নেত্রকোনা শহরের অভিজাত এলাকা মোক্তারপাড়ায় তাঁর বাসা।