ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্য করে ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এবং আরএমও’র জাল স্বাক্ষরে সাদা স্লিপে লিখে বিনামূল্যের মূল্যবান ও অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বিতরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ইন্টার্নি নার্সদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (২০ মে) দুপুর ১২টায় অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সদর হাসপাতালে সরেজমিনে বহিঃবিভাগের ওষুধ বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় স্থানীয় দুটি নার্সিং কলেজের প্রশিক্ষণরত নার্সদের সদর হাসপাতালে প্রশিক্ষণকালীন কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি নার্সিং কলেজ দুটির অধ্যক্ষের সাথে আগামী শনিবার আলোচনা করে প্রশিক্ষণরত নার্সদের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. টি. এম. মেহেদী হাসান সানী।
জানা গেছে, এর আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র বিশেষায়িত মোবাইলভিত্তিক অ্যাপস (প্যাক্ট্যাপ) এর মাধ্যমে কমিউনিটি মনিটরিং থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরা হয়। হাসপাতালের স্টাফ এবং প্রশিক্ষণার্থী নার্সদের কোনো কোনো সদস্য ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া শুধুমাত্র সাদা স্লিপে লিখে মূল্যবান ও অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ নেওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়।
এতে ওষুধের স্টক দ্রুত খালি হয়ে গেলে প্রকৃত রোগী, দুস্থ ও সুবিধা বঞ্চিত রোগীরা প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন বলেও কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। পরে এ বছর ১৮ জানুয়ারি হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. শামীম আহমেদ এ অনিয়ম রোধ করতে ৬টি নির্দেশনাসহ একটি নোটিশ জারি করেন। কিন্তু নির্দেশনা প্রদান করা সত্ত্বেও ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই হাসপাতালের স্টাফ এবং প্রশিক্ষণরত নার্সদের ওষুধ নেওয়ার বিষয়টি থামানো যায়নি বলে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (২০ মে) সকাল থেকে টিআইবি’র সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সহযোগী অ্যাক্টিভ সিটিজেন্স গ্রুপ (এসিজি) ও ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপের সদস্যরা কমিউনিটি মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এসময় বিষয়টির সত্যতা পান তারা। পরে দুপুরে হাসপাতালের সভাকক্ষে আয়োজিত অধিপরামর্শ সভায় কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। টিআইবি’র এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মিজানুর রহমানের পরিচালনায় অধিপরামর্শ সভায় উপস্থিত ছিলেন, সদর হাসাপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. টি. এম. মেহেদী হাসান সানী, সদর হাসপাতাল কেন্দ্রিক অ্যাক্টিভ সিটিজেন্স গ্রুপের সমন্বয়ক আরিফুর রহমান রায়হান, সহসমন্বয়ক সুমাইয়া আক্তার, মো. নাইম খান, নুসরাত জাহান বৃষ্টি, এনি, ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপের সদস্য রিমন মাহমুদ, মো. শাহরিয়া পাপন, কাকন আক্তার, আরিফুল ইসলাম আকাশ ও টিআইবি’র কর্মীবৃন্দ।
সভা শেষে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. টি. এম. মেহেদী হাসান সানী টিআইবি’র এসিজি ও ইয়েস গ্রুপকে সঙ্গে নিয়ে বহিঃবিভাগের ওষুধ বিতরণ কেন্দ্রে সরেজমিনে পরিদর্শন করে ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এবং আরএমও’র জাল স্বাক্ষরে বিনামূল্যের মূল্যবান ও অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বিতরণের অভিযোগের সত্যতা পান। এরপর সকল প্রশিক্ষণরত নার্স ও হাসপাতালের কর্মরত নার্সদের সভাকক্ষে ডেকে নার্সিং কলেজের প্রশিক্ষণরত নার্সদের সদর হাসপাতালে প্রশিক্ষণকালীন কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করেছেন।
অ্যাক্টিভ সিটিজেন্স গ্রুপের (এসিজি) সমন্বয়ক আরিফুর রহমান রায়হান বলেন, আমাদের এসিজি গ্রুপের সদস্য ও ইয়েস গ্রুপের সদস্যরা হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নে হাসপাতালের সমস্যাগুলোর বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। ছয়মাস আগে বন্ধ হওয়া হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন, অ্যাম্বুলেন্স ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। তবে সদর হাসপাতালে বাইরের বিভিন্ন ক্লিনিকের দালালদের হয়রানি, খাবার পানির সমস্যা, ওষুধ বিতরণে অনিয়মসহ বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরা হয় এবং তা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয় আজকের অধিপরামর্শ সভায়।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. টি. এম. মেহেদী হাসান সানী বলেন, যার যতটুকু প্রয়োজন সেটুকু ওষুধ নেবে। কিন্তু প্রেসক্রিপশনের (ব্যবস্থাপত্র) বাইরে নয়। অনিয়ম অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় স্থানীয় দুটি নার্সিং কলেজের প্রশিক্ষণরত নার্সদের সদর হাসপাতালে প্রশিক্ষণকালীন কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি নার্সিং কলেজ দুটির অধ্যক্ষের সঙ্গে আগামী শনিবার তাদের কলেজের প্রশিক্ষণরত নার্সদের বিষয়ে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এবং যেসব ঘাটতি রয়েছে তা উত্তোরণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।