রুহুল আমিন, ডিমলা(নীলফামারী)

এবারের এসএসসি পরীক্ষায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ি স্কুল এন্ড কলেজের স্কুল শাখা থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছে শারমিন আক্তার মনি।এতে খুশি হয়েছেন হতদরিদ্র পরিবারের সব সদস্য, স্কুলের শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা। তবে অর্থাভাবে সেই আনন্দ এখন বিষাদে পরিণত হচ্ছে শারমিনের।

জিপিএ-৫ পেয়েও পরিবারের আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শারমিনের। কোথায় পাবেন অর্থ, কে দেবে এ অর্থের জোগান এই শঙ্কায় দিন কাটছে দরিদ্র পরিবারের মেয়ে শারমিনের।

জানা যায়,শারমিনের বাবা বদরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক প্রতিবন্ধী। গর্ভধারিনী মা অন্যত্র একাকী বসবাস করেন চার বছর হলো। খুব ছোট বয়স থেকেই শারমিন আক্তার মনি চাচার বাড়িতে আশ্রিত। ছোট চাচা নাজমুল ইসলাম শুটিবাড়ি বাজারে ছোট্ট একটি পান-সুপারির দোকান দিয়ে কোনোমতে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করেন। নাজমুল আলমেরও দুই মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে। তার দুই মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় লেখাপড়া করে। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুঁরায়। অভাব অনটনে কোনমতে সংসার চলে তাদের। শারমিন আক্তার মনির দাদীর সঙ্গে একসাথে বসবাস করেন। দাদাও মারা গেছেন ৫ বছর হবে। বয়সের ভারে দাদীও নূয়ে পড়েছে। কোমরে পড়েছে ভাঁজ। বৃদ্ধ দাদী কানেও কম শুনেন চোখেও কম দেখেন। অভাবী সংসারে খেয়ে না খেয়ে কোনমতে সংসার চলে তাদের। দুই ভাই-বোনের মধ্যে শারমিন আক্তার মনি সবার বড়।

শারমিন আক্তার জানায়, নিজে প্রাইভেট পড়িয়ে সেই টাকায় নিজের এবং বৃদ্ধ দাদীর যৎসামান্য খরচ জোগাতে সহায়তা করেছে। এখন ভালো কোনো কলেজে ভর্তি এবং পড়ালেখায় প্রয়োজনীয় টাকা তার ছোট চাচা ও বৃদ্ধ দাদীর পক্ষে জোগান দেওয়া সম্ভব নয়।

শারমিন আক্তার মনির বৃদ্ধ দাদী সোনাফুল বেগম জানান, তার নাতনি খুবই মেধাবী। নিজে প্রাইভেট না পড়ে অন্যদের প্রাইভেট পড়িয়ে নিজেরসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আর্থিক সহায়তা করেছেন। শারমিন আক্তার পড়ালেখা করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায়। সেবা করতে চায় দেশ ও জাতির।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, দরিদ্র পরিবারের মেধাবী মেয়ে শারমিন সে এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করায় আমরা গর্বিত। প্রশাসনসহ সমাজের বিত্তবানরা নজর দিলে শারমিনের ভালো কলেজে পড়াশোনা আটকাবে না।

গয়াবাড়ি স্কুল এন্ড কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন জানান, শারমিন আক্তার অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও ভালো রেজাল্ট করে এখন অর্থের অভাবে ভালো কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার।

এ প্রসঙ্গে নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version