সিয়াম হাসান, গাইবান্ধা প্রতিনিধি: প্রচণ্ড দাবদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রাণিকুলেরও । প্রকৃতির এমন বৈরী আচরণের জন্য অনেক কারণের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত হারে গাছ কেটে ফেলাও একটি বলে চিহ্নিত করেছেন পরিবেশবাদীরা। এজন্য তারা বৃক্ষরোপণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সাধারণ মানুষের মধ্যে গাছের গুরুত্ব নিয়ে জোর আলোচনা চলছে।
কিন্তু সচেতন নাগরিকরা যখন গাছ লাগানোর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন, ঠিক তখনই উল্টো পথে হাঁটছে গাইবান্ধা জেলা পরিষদ। সম্প্রতি সড়কের দুই পাশে থাকা প্রায় ১৮৯২ টি অপরিপক্ক গাছ কাটতে দরপত্র আহ্বান করেছে তারা। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবাদীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ থেকে কামদিয়া ও রাজাবিরাট থেকে কামদিয়া সড়কের দুই পাশে থাকা ১৮৫২ টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কাটতে দরপত্র আহ্বান করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে গাইবান্ধা জেলা পরিষদ ।
গত ২২ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান স্বাক্ষরিত ঐ বিজ্ঞপ্তিতে , গোবিন্দগঞ্জ -কামদিয়া- রাজাবিরাট সড়কের দুই ধারে আরডি -৯ প্রকল্পের আওতায় রোপণকৃত গাছগুলো১২ টি প্যাকেজের মাধ্যমে বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। বিক্রির জন্য মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা এসব গাছের মধ্যে রয়েছে রেইন ট্রি , মেহগনি, সেগুনসহ নানা ধরনের গাছ ।বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত তারিখ অনুযায়ী, ৫ মে ছিলো দরপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ।
এদিকে সড়কের পাশে গাছ কাটার খবরে ক্ষোভে ফুঁসছে পরিবেশবাদী সংগঠনের সদস্য ও ঐ এলাকার সাধারণ মানুষ। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার আদিবাসী সাঁওতাল নেতা ও সমাজকর্মী ফিমিমন বাস্কে বলেন, গোবিন্দগঞ্জ – কামদিয়া সসড়কের দুপাশে প্রচুর গাছ থাকায় এখানকার পরিবেশ তুলনামূলকভাবে শীতল। গাছগুলোতে অনেক পাখির বাসা রয়েছে। এসব গাছ কাটা হলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে।’
স্থানীয় কৃষক হায়দার আলী বলেন, ‘নিয়মিত আমরা এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। ক্লান্ত হয়ে পড়লে প্রায়ই সড়কে গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিতাম। গাছগুলো কাটায় আর বসা হবে না। গাছের কারণে মানুষ স্বস্তিতে সড়কে চলাচল করতে পারত।’
পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ নেট গাইবান্ধা জেলা শাখার সভাপতি মারুফ হাসান বলেন, দেশে ১৭ ভাগ বনায়ন থাকা দরকার। কিন্তু সেই তুলনায় বনায়ন আছে মাত্র ৭ ভাগ। তবুও সামান্য অর্থের লোভে কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে।পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গাছ রোপণের বিকল্প নেই। সেখানে নির্বিচারে গাছকে কেটে ফেলা খুব দুঃখজনক। আমরা চাই বিলম্বে এই গাছ কাটার টেন্ডার বাতিল করা হোক।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্থানীয়দের নিয়ে এলাকাভিত্তিক সমিতি গঠন করা হয়। সমিতির সদস্যরা বিভিন্ন সড়কের ধারে জ্বালানি কাঠের গাছের চারা রোপণ ও দেখাশোনা করেন। বয়স ১০ বছর পূর্ণ হলে গাছ কাটা ও বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। গাছ বিক্রির ৫৫ ভাগ টাকা পান সমিতির সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ পায় ৫ ভাগ।
এ বিষয়ে জানতে গাইবান্ধা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রউফ তালুকদারের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি ।