রুহুল আমিন,ডিমলা (নীলফামারী)
এই বৈশাখের তীব্র গরমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং। চলমান এই অব্যাহত লোডশেডিং এ নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী ও তাদের স্বজনেরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
সেবা গৃহীতার অভিযোগ, সারা দেশে তাপদাহের সতর্কবার্তা বা হিট অ্যালার্ট জারি করেছে সরকার। অথচ এই হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও লোডশেডিংয়ের সময় তা চালানো হয় না। এতে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনসহ চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীগণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে মাঝরাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগী ও তাদের স্বজনদের দুর্ভোগ বেড়ে যায় বহুগুণ। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, জ্বালানি তেলের পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় হাসপাতালের জেনারেটর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বিগত আট বছর আগে এ হাসপাতালে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে ইঞ্জিন চালিত ৮কেভি (কিলো ভোল্ট) ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর বরাদ্দ দেয় সরকার। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এই জেনারেটর দিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বর্হিবিভাগ, নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব। বিদ্যুৎ চলে গেলে জরুরী পরিস্থিতিতে এটি বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের কথা। কিন্তু এটি চালানোর জন্য তেল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে এটি হাসপাতাল বা রোগীদের কোনো কাজেই আসছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সিলিংয়ে ঝুলছে সারি সারি বৈদ্যুতিক পাখা৷ কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় সবই বন্ধ। বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকা সেবা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনেরা তীব্র এই গরমে ছটফট করছে। অব্যাহত লোডশেডিং এর এ সময় রোগী ও তার স্বজনরা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করলেও গরম কাঁটছে কিছুতেই।
রোগীর স্বজনেরা জানান, বিদ্যুৎ যখন চলে যায় তখন অসহনীয় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সে সময় হাতপাখাই তাদের একমাত্র ভরসা। তাদের দাবি, হাসপাতালে আগত রোগীদের কথা চিন্তা করে লোডশেডিংয়ের সময় জেনারেটর বা অন্য বিকল্প উপায়ে বৈদ্যুতিক পাখা চালানোর ব্যবস্থা করা। যাতে তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয় এই অসহনীয় ভ্যাপসা গরম থেকে।
শিশু ওয়ার্ডের শয্যায় চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের শিশু বৃষ্টিকে (৪)। পাশে পাখা দিয়ে বাতাস করছেন তার বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগে চুলার আগুনে বাম পায়ের নীচের অংশ দগ্ধ হয় বৃষ্টির। দুইদিন ধরে এ হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। বেশি গরম পড়লে মেয়েটা ছটফট করে। বিদ্যুৎ চলে গেলে এই গরমে একেবারেই কাহিল অবস্থা হয় তাদের। তারা জানান, এটি একেবারে বদ্ধ ঘর। সব সময় ঘরে গরম থাকে। এরপর মানুষের যাতায়াতে গরমের পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। তার স্ত্রী জানান, তাদের বেডের উপর পাখাটি প্রায় অকেজো। কাউকে বলেও কোন লাভ হচ্ছে না।
রোগীর স্বজন মেঘলা বানু, হাজেরা বেগম, লিলি বেগম ও আকমল হোসেন জানান, দিনে কয়েকবার লম্বা সময় বিদ্যুৎ থাকে না। এ সময় শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতীসহ উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হন। হাসপাতালে এসে সুস্থ হওয়ার চেয়ে গরমে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তাদের রোগীরা। তারাও ভোগান্তিতে পড়ছেন। রোগীদের স্বস্তির জন্য যা হাতের কাছে পাচ্ছেন তা দিয়েই বাতাস দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডাঃ মুস্তাফিজুর রহমান জানান, হাসপাতালের নিজস্ব জেনারেটর রয়েছে। তবে পর্যাপ্ত জ্বালানির বরাদ্দ না থাকায় এটি সব সময় চালানো হয় না। শুধু ওটি বিভাগের জন্য অস্ত্রপচারের সময় জেনারেটর চালানো হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএসও) ডাঃ রাশেদুজ্জামান জানান, যেখানে জরুরি প্রয়োজন সেখানে জেনারেটর (বিদ্যুৎ) সরবরাহ হয়। জ্বালানি যতটুকু বরাদ্দ পাওয়া যায় সে অনুযায়ী জেনারেটর চালানো হয়।