দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক সর্বশেষ পরিপত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানের চাকুরি মেয়াদ বৃদ্ধির স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও আবু আব্বাছ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের চাকুরির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির পত্রটিসহ কলেজের শিক্ষকদের তথ্য আদান-প্রদানের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক জহিরুল ইসলাম “স্যার আরো এক বছর আমাদের মধ্যে থাকবেন সেই জন্য শুভ কামনা। তবে আমি যেটুকু জানি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতীত কোনক্রমেই চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ-বৃদ্ধি সম্ভব নয়” এমন বাক্য পোষ্ট করেন। পরবর্তীতে ওই শিক্ষককে অধ্যক্ষ মোবাইলে “আমি তো এক বছর চাকুরি করবাম, তুই তোর চাকুরি করিস” বলে হুমকী দেন।

শিক্ষক জহিরুল ইসলাম জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান নয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বিধি থাকলেও আমরা জানি মাউশি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করেই চলেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে অধ্যক্ষের চাকুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দিল এটা আমার কাছে বোধগম্য নয়।

গত ৬ এপ্রিল এ কলেজের গভর্নিং বডির মিটিংয়ে শিক্ষক পরিষদের নির্বাচিত তিন শিক্ষক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের পরিপন্থি চাকুরির মেয়াদ বৃদ্ধি বিষয়ে তারা প্রতিবাদ ও তাদের বক্তব্যও তুলে ধরেন। এ কলেজসহ জেলার অধিকাংশ শিক্ষকগণের ধারণা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১১ জানুয়ারির পরিপত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

নাম না প্রকশে কয়েকজন শিক্ষক জানান এ কলেজের অধ্যক্ষ ও কলেজের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরেও কীভাবে অধ্যক্ষের চাকুরির মেয়াদ বৃদ্ধি পায় এনিয়ে তারাসহ অধিকাংশ শিক্ষকের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

তারা আরও জানান, অধিভুক্ত নয় এমন কোন বিষয়ের শিক্ষক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কার্যক্রমে অংশগ্রহণে নিয়ম না থাকলেও বিধিবহির্ভুতভাবে এ কলেজের অধ্যক্ষ কর্তৃক গত ২০ এপ্রিল গঠিত ‘অনার্স ৩য় বর্ষ পরীক্ষা-২০২২’ এর পরিচালনা কমিটিতে কারিগরি (বিএম) শাখার শিক্ষক মো. ফজলুল হককে সদস্য করেছে। অধ্যক্ষের কাছের ব্যক্তি হওয়ার সুবাদে প্রানিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মো. নুরে আলম ফকির ২০২২ সালের ৮ জানুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত একই ব্যক্তি একই দিনে দুইটি জাতীয় পরীক্ষার (অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষা ২০২০ ও বিএড ২য় সেমিষ্টার ২০২০) পরিদর্শকের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান এবং ভাতাও উত্তোলন করেন যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি বিরোধী।

“কলেজের আয় পাঁচ কোটির বেশি, বেতন পান না ২৮ শিক্ষক” একই শিরোনামে গতবছর এপ্রিলের ১১ তারিখ অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘শিক্ষা বার্তা ডটকম’ ও ‘বাংলা ট্রিবিউন ডটকম‘ এ কলেজ সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশিত হয়। একই বছর ২৩ মে ‘বাংলা ট্রিবিউন ডটকমে‘ “শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন বেপরোয়া?” শিরোনামে প্রতিবেদনে উল্লেখ, ‘নেত্রকোনা আবু আব্বাছ কলেজের মোট পাঁচ কোটি টাকা আয়ের বেশি অংশ তছরুপ হলেও প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি ম্যানেজিং কমিটি। উল্টো ম্যানেজিং কমিটি এ ঘটনার দায় নিতে চায়নি। শিক্ষকরা বেতন না পেলেও ম্যানেজিং কমিটি কোনও ভূমিকা নেয়নি রহস্যজনক কারণে’।

এরপর এ বিষয়ে গত বছর ৯ অক্টোবর বেসরকারি কলেজ শাখার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক তপন কুমার দাস নেত্রকোনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. নূরুল বাসেতকে সরেজমিনের তদন্ত পূর্বক ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন প্রেরণের নির্দেশ দেন। পরে নেত্রকোনা সরকারি কালেজের অধ্যক্ষ তাঁর কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফাসহ দুজন শিক্ষা ক্যার্ডারের কর্মকর্তাকে নিয়ে তদন্ত শেষে অসঙ্গতিসহ প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।

এরআগে এ প্রতিবেদনের পরিপক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগের সেলের পরিচালক উত্তম কুমার মন্ডল তিনি শিক্ষা ভবনের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও পত্রের মাধ্যমে অবগত করেন।

গত বছরের ১৭ জানুয়ারি ‘দৈনিক মুক্ত খবর’ পত্রিকায় “শিক্ষা সনদ এক বিষয়ে এমপিওভুক্ত হন অন্য বিষয়ে”, ও একই তারিখ ‘দৈনিক একুশে সংবাদ’ পত্রিকায় “নেত্রকোনা আবু আব্বাছ ডিগ্রী কলেজ শিক্ষকের সনদ এক বিষয়ে এমপিওভুক্ত হলেন অন্য বিষয়ে ১০ বছর ধরে বেতন ভাতাদি উত্তোলন” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘অধ্যক্ষের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় কারিগরি শাখার এমপিওভুক্ত শিক্ষক হয়েও গোলাম সারোয়ার মামুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্সের ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণ এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং অন্যান্য জৈষ্ঠ্য শিক্ষকগণ তাকে (গোলাম সারোয়ার) সমীহ করে চলে‘। এ বিষয়ে এরআগে ১৬ জানুয়ারি নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল ‘দ্যা মেইল বিডি ডটকমে’ “শিক্ষা সদন এক বিষয়ে, ১০ বছর ধরে এমপিওভুক্ত হলেন অন্য বিষয়ে” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।

২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল অনলাইন নিউজ পোর্টালদ্বয় ‘দ্যা মেইল বিডি ডটকমে’ “মোবাইলে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে কেন্দ্রের বাহিরে প্রেরণ, কমিটির সদস্যের ভাইয়ের” ও ‘দৈনিক পূর্বময়ে’ “নেত্রকোনায় শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্নপত্রের ছবি কেন্দ্রের বাহিরে প্রেরণ, কমিটির সদস্যের ভাইয়ের” শিরোনামের প্রতিবেদনে জানা যায়, ‘নিয়ম অনুযায়ি সিনিয়র শিক্ষক হবেন কলেজের প্রতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। সহকারি অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম প্রানিবিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক হলেও অধ্যক্ষের আস্থাভাজন থাকায় তাঁকে ডিঙ্গিয়ে মো. নুরে আলম ফকির বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পান। অধ্যক্ষের মদদপুষ্ট হওয়ায় কলেজের বিভিন্ন কার্যক্রমের সকল কমিটি ওই শিক্ষক (নুরে আলম) গঠন করেন এবং নিজেই সকল কমিটিতে থাকেন ও সুবিধাভোগ করেন’।

২০২০ সালের ৪ অক্টোবর ‘দৈনিক দেশ রূপান্তরে’ “নেত্রকোনা আবু আব্বাছ ডিগ্রী কলেজ পরিপত্রের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বাড়তি টাকা আদায়” শিরোনাম প্রতিবেদনে উল্লেখিত, ‘আন্ত:শিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির জারি করা নির্দেশনাবলীর ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে উন্নয়ন ফি বাবদ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে একদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকা বাড়তি আদায় করেছে কলেজটি’। এরআগের দিন এ বিষয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘দৈনিক পূর্বময়ে’ “আবু আব্বাছ ডিগ্রী কলেজ একাদশ শ্রেণি ভর্তিতে সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ’ শিরোনামে সংবাদ পরিবেশন করে।

২০০৮ সালের ৯মার্চ স্বাক্ষরিত একই কলেজের ইসলামিক ষ্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুর রশিদ (আহবায়ক), ভূগোল বিভাগের প্রভাষক সুকেশ চন্দ্র সরকার (সদস্য) ও হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. ফজলুল হকের (সদস্য) সমন্বয়ে তিন সদস্যের এক তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ, মো. আবুল কালাম আজাদ একই কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালীন বিভিন্ন সময় শুধু ক্যাশ বহিতে ৪৩জন শিক্ষক-কর্মচারীদের নামে ৭৯ হাজার ১২৭ টাকা ঋণ দেখিয়ে উত্তোলন করেন। যাদের নামে ঋণ দেখানো হয়েছে, তাঁরা যে ঋণ গ্রহণ করেছেন বিপরীতে কোন প্রমাণ পায়নি এই তদন্ত কমিটি। পরবর্তীতে আত্মসাতকৃত টাকার কিছু অংশ তৎকালীন কলেজের সভাপতি এডিসি-সার্বিক (বর্তমানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক) মো. মিজানুর রহমানের চাপে কলেজের তহবিলে জমা দেন।

এতো অভিযোগ ও সংবাদ প্রকাশের পরেও কোন অদৃশ্য শক্তির বলয়ে মো. আবুল কালাম আজাদের চাকুরির মেয়াদ বর্ধিত করা হলো এনিয়ে শিক্ষক সমাজে রয়েছে ব্যাপক গুঞ্জন ও সমালোচনা।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার চাকুরির মেয়াদ বৃদ্ধির পত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিধি অনুযায়ি দিয়েছে। সরকারের পরিপত্রের সাথে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধির কিছুটা সাংঘর্ষিক আছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু আমাদের কমিটি দেয় ও কলেজ চালায় তাদের নিয়ম অনুযায়ি দিয়েছে’। এক শিক্ষক আপনার চাকুরি মেয়াদ বৃদ্ধি বিষয়ে মেসেঞ্জারে পোষ্ট করলে তাকে মোবাইলে গালমন্দ ও হুমকী- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না‘। পরে অডিও রেকর্ডের বিষয়টি অবগত করলে, তিনি প্রতিবেদককে দেখা করতে বলেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিপত্র ও আপনার স্বাক্ষরিত চাকুরি মেয়াদ বৃদ্ধির পত্র সাংঘর্ষিক কিনা এমন প্রশ্নে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) ফাহিমা সুলাতান জানান, ২০১৯ সালের যে বিধি ছিল তার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংযোজন ও বিয়োজন করে গত ডিসেম্বর মাসের ২১ তারিখ ওয়েব সাইটে দেওয়া হয়েছে। যেসকল অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বড়োসড়ো কোন এলিগেশন থাকবে না এবং কলেজের প্রয়োজন, সুপারিশ ও কলেজ যদি মনে করে অধ্যক্ষকে রাখতে পারলে উপকৃত হবে, সেক্ষেত্রে আমরা দিয়ে থাকে। তবে সবক্ষেত্রে আমরা দেই না, যাচাই-বাছাই করেই দিয়ে থাকি।

1 2
Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2024 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version