সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়নি দীর্ঘ ৬ বছরেও। দীর্ঘদিন যাবৎ সম্মেলন না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব আসছে না জেলা ছাত্রলীগে। এ কারণে জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগে নেমে এসেছে চরম স্থবিরতা। হতাশ হয়ে পড়েছেন অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এতে পদবঞ্চিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি তারা সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করার দাবিও তুলেছেন।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে নতুন কমিটি না হওয়ায় এই কমিটির অধিকাংশ দায়িত্বশীল নেতারা ছাত্র রাজনীতি বাদ দিয়ে বিয়ে করে ফেলেছেন। শুধু এখানেই শেষ নয় অনেক নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে ছাত্র রাজনীতি থেকে সরে দাড়িয়েছেন। এদিকে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন না করারও অভিযোগ উঠেছে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি অনেক নেতাকর্মী দলীয় কোনো কর্মসূচিতে নিচ্ছেন না অংশ। এভাবে চলতে থাকলে নতুন নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়বে জেলা ছাত্রলীগে।
অভিযোগ আছে, সুনামগঞ্জ জেলার আওতাধীন ১২ টি উপজেলার বিভিন্ন কমিটিতে পদ বাণিজ্য এবং ছাত্র নয় এমন পছন্দের লোকদেরকে কমিটিতে রাখার। সর্বশেষ সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ, পৌর ও সদর উপজেলা কমিটি গঠনেও রয়েছে নানান অভিযোগ। এই ৩টি ইউনিটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পছন্দের লোকদের করা হয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক। যার কারণে কমিটি ঘোষণা করার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পদ বঞ্চিত একাধিক নেতাকর্মী। অসন্তোষ প্রকাশ করেন জেলা ছাত্রলীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতারা।
জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি অনুমোদন দিয়েছিল সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদ। এতে দীপঙ্কর কান্তি দে কে সভাপতি ও আশিকুর রহমান রিপনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরবর্তীতে নানা জটিলতা কাটিয়ে ৪ বছর পর ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল পুনরায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ বহাল রেখেই ২৯৪ বিশিষ্ট পুর্নাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। তবে, পুর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরপরই আসে নানা বিতর্ক। ঐ কমিটিতে বিবাহিতদের স্থান পাওয়া নিয়ে অভিযোগ উঠেছিলো।
নেতারা জানান, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫-এর গ ধারা অনুযায়ী বিবাহিত ব্যক্তি ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পাবেন না। এদিকে বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দীপঙ্কর কান্তি দে ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপন এর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে আসা চিনি, পেয়াজসহ একাধিক পণ্য পাচার করার। যা দেশের শীর্ষ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়৷ তাদের নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগের একটি দল প্রতিনিয়ত রাতে এসব পন্য সামগ্রি পাচার করে থাকেন বলেও অভিযোগ করেন নেতাকর্মীরা।
দ্রুত সম্মেলনের দাবি জানিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইফতি বখত বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি না হওয়ায় নতুন কোনো নেতৃত্ব আসছে না, এতে তৃণমূলে হতাশা শুরু হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে একটি স্মার্ট নেতৃত্বের কাছে জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্ব দেওয়া হউক।
একই দাবি জানিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হলে জেলা ছাত্রলীগের এই স্থবিরতা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে। অনেক নেতাকর্মী পদ প্রত্যাশী রয়েছেন, যাচাই-বাছাই করে দক্ষ ও জনপ্রিয় ছাত্র নেতাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিলে ছাত্র রাজনীতি আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
জেলা ছাত্রলীগের উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক দীপ্ত দাস তন্ময় বলেন, বর্তমান কমিটির বয়স ৬ বছর হয়েছে, তার পরও এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হচ্ছে না। আমরা চাই এটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হউক।
জেলা ছাত্রলীগ নেতা তানভীর আহমদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে বলেন, বর্তমান এই কমিটিতে গ্রুপিংয়ের রাজনীতি শুরু হয়েছে। উপজেলা কমিটি সহ জেলা ছাত্রলীগের আওতাধীন যতগুলো ইউনিটে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে সবগুলোতে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর বলয়ের মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে করে তৃনমূলের অনেক নেতাকর্মী পদ বঞ্চিত রয়েছেন।
সম্মেলনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সম্মেলনের মাধ্যমে দক্ষ নেতাদের কাছে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হউক।
সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন করার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা তা জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপন বলেন, জেলা ছাত্রলীগের আওতাধীন কয়েকটি উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণার পরপরই আমরা সম্মেলন করার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বরাবর আবেদন করবো। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা যখন সম্মেলন করার আগ্রহ প্রকাশ করবেন তখনই সম্মেলন করা হবে।