ডা.এম.এ.মান্নান
নাগরপুর(টাঙ্গাইল)সংবাদদাতাঃ
সারাদেশ ব্যাপী প্রখর রোদ ও তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন।পাশাপাশি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলাও তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে। রোদে পুড়ছে প্রকৃতি, বইছে তাপ প্রবাহ, স্বস্তি নেই কোথাও। জনজীবনে কাহিল অবস্থা। দুপুরের রোদে খোলা আকাশের নিচে হাঁটলে গরম বাতাসে মুখমন্ডল পুড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। সূর্য এতটাই প্রখর যে,বাইরে বের হলেই মনে হচ্ছে অগ্নিকুন্ড। একটু প্রশান্তি ও শরীরকে সতেজ রাখার জন্য মানুষ ছুটছেন গাছের ছায়া, কিংবা পুকুর পাড়। এছাড়াও গরমের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে শিশুরা পুকুর কিংবা নদীর পানিতে পার করছে সময়। শুধু দিনের বেলাতেই নয়, রাতেও গরমে মানুষ ঘুমাতে পারছে না কারন প্রচুর লোডশেডিং আর বৈদ্যুতিক পাখাও হার মানছে এই তিব্র গরমের কাছে।
শনিবার(২০ এপ্রিল) সরেজমিনে নাগরপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। ভ্যাপসা গরমে অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে কর্মজীবী ও বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা আর এই তীব্র রোদে মানুষের মুখে দেখাচ্ছে মলিনতার ছাপ।
গাছের ছায়া আর পুকুর পাড়ে বসে থাকা কয়েকজন দিনমজুরী বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমে কাজে মন বসছে না আর দুপুরের কড়া রোদ আর সহ্য হচ্ছে না, তাই কাজের ফাঁকে গাছের নিচে আশ্রয় নিচ্ছি।
কৃষক আব্দুল বাতেন বলেন,তীব্র গরমের মাঝে ফসল কাটতে যেয়ে অবস্থা একেবারে নাজেহাল। বার বার ঠান্ডা পানি আর লেবুর শরবত পান করলেও স্বস্তি মিলছে না।
এই অতিরিক্ত গরমে নাগরপুরের জনজীবন যেন গৃহবন্ধী হয়ে পড়েছে ফলে দেখা দিচ্ছে জ্বর, সর্দি, কাশির প্রাদুর্ভাব। এ বিষয়ে একাধিক ডা. সহ এলাকার বয়স্ক বেশ কয়েকজন ব্যক্তিরা জানান, বিগত কয়েকদিনে গরমের কারণে বেশি অসুস্থ হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা।
এদিকে তাপদাহ বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে ঠান্ডা পানীয়। ফুটপাতে প্রচুর পরিমানে বিক্রি হচ্ছে আখেঁর রস,তালের শাস,ডাব ও বিভিন্ন ফলমূলের সাথে লেবুর শরবত।
সদর বাজারের রিক্সা চালক বলেন, প্রচন্ড গরম ও তাপমাত্রা বেশী হওয়ায় কাজে বের হয়েও যাত্রী কম পাই, ফলে আমাদের ইনকাম কম হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-টাংগাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা,বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা আগামী কয়েকদিন এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।এ অবস্থায় দেশব্যাপী শুক্রবার তিন দিনের জন্য সতর্কতামূলক হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিকের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ সতর্কতা জারির কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়-দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আরও তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। পাশাপাশি তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিও বাড়তে পারে বলে জানানো হয়।এছাড়া সারা দেশে হিট আল্যার্ট জারি থাকলেও কিছু স্থানে বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস
প্রখর গরম ও স্বাস্থ্য বিষযে মুকতাদির হোমিও চিকিৎসা কেন্দ্রের সিনিয়র কনসালটেন্ট জানান, গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের প্রতি অধিক মনোযোগী হতে হবে কারণ কিছু খাবার আছে যা আমাদের শরীর ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। বেশী গরমে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি ও লবণের অনেকটাই বের হয়ে যায়। অনেক সময় দেখা দেয় পানি শূন্যতা। এছাড়াও গরমে ডায়েরিয়া, হিটস্ট্রোক ইত্যাদি রোগ সমুহ হতে পারে। এসময় অতিরিক্ত মশলাদার খাবার, তৈলাক্ত খাবার পরিহার করে পুদিনা পাতা, তরমুজ, শসা, দই, পানি, শকাসবজি এ সমস্ত খাবার বেশী বেশী খেতে হবে।এমন পরিস্থিতিতে বেশি করে বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন ও তরল খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন এ-ই চিকিৎসক কর্মকর্তা।