চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি॥
ভোলার চরফ্যাশনে আশ্রায়ন প্রকল্পের জরাজীর্ণ ঘরগুলো পুনঃনির্মাণ শেষে আশ্রিতদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ঝিনুক আশ্রয়ন প্রকল্পে ১০০ , ও চর মানিকা ইউনিয়নের কবি মোজাম্মেল হক আশ্রয়ন প্রকল্পে ১৩৫ এবং জাহানপুর ইউনিয়নের আটকপাট গ্রামের মাইকেল মধুসোধন আশ্রয়ন প্রকল্পের ১২০টিসহ ৩৭০ হতদরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে সেমি পাকা ঘর বিতরণ করা হয়। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সেমি পাকা চার কক্ষ বিশিস্ট ঘর পেয়ে হাসি ফুটেছে হত দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে। গতকাল মঙ্গলবার আশ্রায়ন প্রকল্পে আশ্রিত পরিবার এবং প্রকল্পের ঘর পুনঃনির্মাণে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এই প্রকল্প নিয়ে আশ্রিতদের জীবনের হতাশা আর আশাজাগানিয়া অজানা অনেক কথাই ফুটে উঠেছে।
জানাগেছে, গত বছরের জুলাই মাসে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে নওরীন হক যোগদানের পরপর আশ্রায়ন প্রকল্পগুলো ঘুরে দেখেন। এসময় আশ্রিত আশ্রিতদের দুর্দশা এবং ঘরগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন তিনি। প্রকল্পের ঘরে আশ্রিত হতদরিদ্র অসহায় মানুষগুলোর জন্য কিছু করার জন্য উদ্যোগী হন এবং মুজিববর্ষের ঘরের আদলে আশ্রায়ন প্রকল্পের সবগুলো ঘর পুনঃনির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করেন। প্রাথমিক ভাবে অনুসন্ধান করে এমন জরাজীর্ণ ২২০০ঘরে আশ্রিতদের তালিকা প্রস্তত করেন। প্রেরিত প্রস্তাব অনুযায়ী গত নভেম্বর মাসে মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম ধাপে ৩শ ৭০টি ঘর পুনঃনির্মাণের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের মধ্যেও পুনঃনির্মাণ কাজ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে চালিয়ে এখন পুনঃনির্মিত ঘরগুলো নির্মাণ শেষে আশ্রিতদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
চর মানিকা ইউনিয়নের আশ্রিত অন্ধ সুরমা বেগম জানান, অল্প বয়সেই তার বিয়ে হয়। জম্ম থেকেই তিনি দুচোখে দেখেন না। প্রায় ১৭ বছর আগে স্বামী ভুমিহীন দিনমুজর আলাউদ্দিন কবি মোজ্জাম্মেল হক আশ্রয়নে একটি ঘর বরাদ্দ পেয়ে অন্ধ নব বধুকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন স্বামী। কয়েক বছর যেতেই তাদের বসবাসের একমাত্র আশ্রয়ে ঘরটি জরাজীর্ন হয়ে যায়। পলিথিনের ছাওনিতে কাটিয়ে দেন বছরের পর বছর । এবছরে প্রধানমন্ত্রী ঈদ উপহার হিসেবে তারা একটি স্বপ্নের পাকা ঘর বুঝে পেয়েছেন। এখন সরকারের উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসন সুমরার জরাজীর্ণ ঘরটি পুনঃনির্মাণ কাজ শেষে বুঝে পেয়ে জীবনসাহ্নে সেমি পাকা ঝকঝক্ েএকটি নতুন ঘর অন্ধ সুরমার জীবনে একঝলক হাসি হয়ে ধরা দিয়েছে।
ওই আশ্রয়নের বাসিন্ধা জেলে বধু হালিমা বেগম জানান, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচরে নদী ভাঙ্গনের কবলে পরে হারিয়েছে ভিটে বাড়ি। ১৫ বছর আগে প্রকল্পের একটি ঘর পান তিনি। এই ঘরে থেকেই স্বামী- শ্বশুর শ্বাশুরী ও তিন সন্তান নিয়ে বাসা বেঁধেছেন তিনি। ক্ষুদ্র মৎস্য শ্রমিক স্বামীর আয়েই চলে তার সংসার। কয়েক বছরেই ঘর জরাজীর্ণ হয়ে যায়। ঘরটি মেরামতের জন্য কোন সাধ্য ছিলোনা তাদের। জরাজীর্ণ ঘরটি পলিথিলিন মুড়িয়ে রোদ- ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষার চেষ্টা করলেও আর্থিক দৈণ্যতার কারণে ঘরটি সংস্কারের কথা চিন্তাও করতে পারেননি। সেই ঘরটি এখন পুনঃনির্মাণ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। মুজিব বর্ষের ঘরে আদলে নির্মাণ করা সেমি পাকা ঘরটি বুঝে পাওয়ার আয়োজনে ইয়াছিন ও হালিমা দম্পতির কাছে মেঘ চাওয়ার আগেই বৃষ্টি হয়ে ধরা দিয়েছে।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানাযায়, আশ্রয়হীন,ভূমিহীনের মতো ভাসমান মানুষের নিজস্ব ঠিকানা নিশ্চিত করতে আশ্রায়ন প্রকল্প শুরু হয় এবং এসব প্রকল্পে নিজের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন সুরমা, হালিমা ও ছকিনা , নাসিমার মতো সমাজের চরম নিঃস্ব অসহায় ১ হাজার ৩শ ৯০টি চরম দরিদ্র পরিবার।এক যুগ বা তার চেয়েও বেশী আগে নির্মিত আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘরগুলো সময়ের ব্যবধানে এখন জরাজীর্ণ এবং বসতির অনুপযোগী হয়ে পরেছে। দীর্ঘ এই সময়ে সরকারি ভাবেও ঘরগুলো সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কিন্ত দারিদ্রের কবলে পতিত অসহায় মানুষগুলোর এসব ঘর সংস্কারের সামর্থ কখনো হয়ে উঠেনি। এমন বাস্তবতা দেখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হকের উদ্যোগে মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করে আশ্রায়ন প্রকল্পের জরাজীর্ণ ২২০০ ঘর পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ গ্রহনের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়। যার প্রেক্ষিতে প্রথম পর্যায়ে চরফ্যাসনে ৩শ ৭০টি ঘর পুনঃনির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে হতদরিদ্র পরিবার গুলোকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হক জানান, ভাসমান দরিদ্র মানুষের আশ্রয় নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময়ে টিনের ছাউনী আর টিনের বেরা বেষ্টিত এসব ঘর নির্মাণ করা হয়। ঘরগুলো এতো জরাজীর্ণ যে তা সংস্কারের উপযোগীও নেই। তাই আশ্রিত পরিবারগুলোর দুর্দশা লাগবের কথা ভেবেই ঘরগুলো মুজিববর্ষের ঘরের আদলে পুনঃনির্মাণের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর করা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে চরফ্যাসনে প্রথম ধাপে ৩শ ৭০টি ঘর পুনঃ নির্মাণ কাজ শেষ করে আশ্রিতদেকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
ঘরগুলো পুনঃনির্মাণে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রত্যেকটি ঘর পুনঃনির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা। সেমি পাকা এসব ঘরে থাকছে রঙ্গিন টিনের ছাউনি। বারান্দাসহ ২টি কক্ষ, রান্নাঘর এবং একটি সংযুক্ত শৌচাগার । আছে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এবং পাকা ঘাটলাসহ পুকুর।