২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে, এটাই এবারের স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (২৫ মার্চ) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এর আগে তিনি ২০২৪ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী ১০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, এবার আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ, জনগোষ্ঠী হবে দক্ষ, আমাদের সরকার হবে স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা হবে স্মার্ট সোসাইটি। ২০৪১ সালে স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব, স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে এটাই আমাদের প্রত্যয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি, তার কারণ পাকিস্তানিরা ’৭১ এর ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল, সকল শহীদদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাই। আর যারা এই গণহত্যার সাথে জড়িত তাদের প্রতি জাতি ঘৃণা জ্ঞাপন করছে। তাদের এই ধরনের কর্মকাণ্ড আর যেন না হয়। তবুও বিশ্বের দিকে যখন তাকাই প্যালেস্টাইনিদের ওপর ইসরায়েল কর্তৃক যে গণহত্যা চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশ তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছে। আমরা প্যালেস্টাইনিদের সাথে আছি, আমরা যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই। যুদ্ধ মানুষের কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। কারণ যুদ্ধকালীন অবস্থা কী, তা আমরা জানি। এমনকি আমরা যে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি, সেখানে আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আলোচনা করছি, আমরা সংঘাতে যাইনি। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়, জাতির পিতা যে নীতিমালা আমাদের দিয়ে গেছেন সেটা আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি এবং সেটা আমরা পালন করে যাব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ দেশ, তবু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের দেশে কিছু ব্যক্তিরা অগ্নিসন্ত্রাস, খুন-খারাবি অনেক কিছু করে থাকে, তাদের সুমতি হোক এটাই আমরা চাই। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত থাকলে যে একটি দেশ এগিয়ে যেতে পারে, উন্নতি করতে পারে তার প্রমাণ আমরা করেছি ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে। এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করে আজকে বাংলাদেশকে অন্তত বিশ্বে একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এই যাত্রা অব্যাহত থাকুক, আমাদের দেশের মানুষ বিশ্বে মাথা উঁচু করে সম্মানের সাথে চলুক, সেটাই আমরা চাই, সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।
বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে, মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এই অবস্থা শুধু আমাদের নয়, বিশ্বব্যাপী সমস্যা। তারপরেও আমাদের দেশে মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, এই রমজান মাসে আমরা মানুষের মাঝে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করছি। আমরা ইফতার পার্টি বাদ দিয়েছি, আমাদের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সকলকে আহ্বান করেছি, ইফতার পার্টি না করে সাধারণ মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ করেন, তাদের পাশে দাঁড়ান। ইফতার পার্টিতে খাওয়া তো বড় কথা না, মানুষকে দেওয়াটাই বড় কথা। খাওয়ার বিষয়টা বাদ দিয়ে দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিয়েছি, মানুষের যেন কোনরকম কষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেছি। এভাবে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, আমাদের লক্ষ্য এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের সম্মানিত, যে মুক্তিযোদ্ধারা জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে আমাদের বিজয় এনে দিয়েছেন, তাদের সম্মান দেওয়া এবং এই গৌরবটা যাতে হারিয়ে না যায়, সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, অনেকে আর বেঁচে নেই, এখনো যারা বেঁচে আছেন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। প্রত্যেকটা শহীদ পরিবার তাদের আমরা মাসিক ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি, যারা গৃহহীন তাদের ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। মৃত্যুর পর তারা যাতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পায়, সেই ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি। দল-মত নির্বিশেষে মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানটা পাচ্ছে, সেখানে আমরা কোনো ব্যতিক্রম করছি না।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু আমাদের স্বাধীনতাই দিয়ে যাননি, রাষ্ট্রটি কীভাবে চলবে বা আগামীতে আমাদের করণীয় কী সে কথাগুলো তিনি বারবার বলেছেন, পথ নির্দেশনা দিয়েছেন। মাত্র তিন বছর সাত মাসের মধ্যে কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ তিনি গড়ে তুলেছিলেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ নেন। সব থেকে বড় কথা মিত্রবাহিনী, ভারতের সেনাবাহিনী যারা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিলেন; সেই মিত্রবাহিনীও কিন্তু স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেছিল, বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। পৃথিবীর কোনো দেশে আজ পর্যন্ত যারা মিত্রবাহিনী তারা কিন্তু সেই দেশে ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে, শুধু বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। এখানে আমি বলব, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতো স্বাধীনচেতা, তিনি আমাদের দেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু পৃথিবীর কোনো দেশে মিত্রবাহিনী এখন পর্যন্ত সেই দেশ ছেড়ে যায়নি, আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের তাকে আমাদের হারাতে হলো।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।