কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন: নেত্রকোণায় গলা কেটে হত্যা শেষে পরিচয় ঢাকতে নৃশংসভাবে লাশের মুখমন্ডল পুড়িয়ে দেওয়া আলোচিত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত দুই খুনীকে পৃথক স্থান থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা এ হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা দায় স্বীকার করেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থেকে গ্রেফতাকৃত মো. মাসুক মিয়া (২৯) সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার সবুজ মিয়া ছেলে। তিনি রাজধানীর মিরপুর-১৪ এলাকায় বসবাস করতো। সে দিনের বেলায় রাজমিস্ত্রীর কাজ আর সন্ধ্যায় ভ্যানে করে কাপড় বিক্রির আড়ালে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতো।
অপরজন রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে গ্রেফতারকৃত ইমরান ফয়সাল (৪৪) ঢাকা ধামইয়ের শহীদুল ইসলামের ছেলে। সে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর পাশাপাশি মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত।
অপরদিকে ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কাশীপুর বিশ্বাসপাড়া এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে। তিনি বিগত তিন-চার বছর যাবত রাজধানীর মিরপুর এলাকায় থাকতেন এবং ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল নিজেই ভাড়া চালাতেন।
সোমবার দুপুরের দিকে র্যাব-১৪ প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা মূলত আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল ছিনতাই ও চুরি চক্রের সদস্য। গত ১০-১৫ পূর্বে গ্রেফতারকৃত ফয়সালকে মাসুক জানায় তার ভাগিনার একটা মোটরসাইকেল দরকার। পরে মাসুক তার ভাগিনার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা এনে ফয়সালকে দেয়। এসময় ফয়সাল মোটরসাইকেল ছিনতাই করে মাসুকের ভাগিনাকে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। গ্রেফতারকৃতরা কয়েকবার মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ে ব্যর্থ হয়ে ঘটনার তিনদিন পূর্বে মাসুক ও ফয়সাল ভুক্তভোগী সাইফুলের মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাজীপুর চৌরাস্তার একটি দোকান থেকে ছুরি কিনে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাসুক ভুক্তভোগীকে জানায় এক সাংবাদিকের তথ্য সংগ্রহ ও ভিডিও ধারণের জন্য নেত্রকোণায় যেতে হবে।
র্যাব জানায় পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৩ মার্চ বুধবার বিকেল ৩টায় মিরপুর-১৪ থেকে মাসুক সাইফুলের সাথে তিন হাজার টাকা ভাড়া মিটিয়ে নেত্রকোণার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথেরমধ্যে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ফয়সাল তাদের মোটরসাইকেলে উঠে। তারা ময়মনসিংহ শহরে পৌঁছালে তিনযাত্রী বহনের দায়ে ট্রাফিক পুলিশ তাদের মোটরসাইকেল আটকায়। ফয়সাল নিজেকে দৈনিক শেষ খবর পত্রিকার ভুয়া সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ট্রাফিক পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে তারা নেত্রকোণায় আসে। সংবাদের তথ্য সংগ্রহের অজুহাতে সময় ক্ষেপন করতে থাকে।
র্যাব আরও জানায়, বুধবার দিনগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ঘটনাস্থল নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের দেওরাজান বালুর চরে ফয়সাল পেছন থেকে রাস্তার পাশের পাথর দিয়ে সাইফুলের মাথায় সজোরে আঘাত করে এবং ভুক্তভোগী মাটিতে পড়ে অচেতন হয়ে যায়। পরে ছুরি দিয়ে গলা কেটে ভুক্তভোগীর মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরিচয় গোপন করতে ভুক্তভোগীর পরিহিত শার্ট-প্যান্ট খুলে মুখমন্ডলে প্যাঁচিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও ভুক্তভোগী সাইফুলের মোবাইল পানিতে ফেলে দেয়। গ্রেফতারকৃতরা মোটরসাইকেল নিয়ে মাসুকের ভাগ্নের নিকট মোটরসাইকেল রেখে আত্মগোপনে চলে যায়। গত ১৪ মার্চ দুপুরের দিকে এক ব্যক্তির মুখমন্ডল পুড়ানো গলাকাটা লাশ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উদ্ধারের পরে ফিঙ্গারপ্রিন্ট থেকে ভুক্তভোগীর পরিচয় সনাক্ত করে।
উল্লেখ্য, লাশ উদ্ধারের পরেরদিন গত শুক্রবার ভোরে এ ঘটনায় নেত্রকোণা খালিয়াজুরী উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের ছালিক মিয়ার ছেলে অন্তর আহমেদ শান্তকে (২১) নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে ভুক্তভোগী সাইফুলের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়।