আরিফ শেখ, রংপুর প্রতিনিধিঃ
রংপুরের তারাগঞ্জে ৭০ বছর বয়সী শাশুড়ির বয়স্ক ভাতার টাকা জামাই তার ব্যাক্তিগত মোবাইল ব্যাংকিং নাম্বারে তুলে খাচ্ছে । ৩৮ মাস ধরে এ কান্ড হয়ে এলেও কিছুই জানে না উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়। ভাতার টাকা না পাওয়া বিধবা মরিয়ম নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
বয়স্ক ভাতা নিয়ে দীর্ঘদিন অনুসন্ধান করে এ ধরনের অনিয়ম ও বাটপারির ব্যাপক তথ্য বেরিয়ে আসে । তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের পলাশবাড়ী এলাকার বাসিন্দা মরিয়ম খাতুন । ৩ কন্যা ও ২ ছেলের জননী । স্বামীহারা মরিয়মের ছোট কন্যার বিয়ে দেন একই এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে সিরাজুলের সাথে । ছোট জামাই হিসেবে আদরের কমতি রাখেনি মরিয়ম । কিন্তু সেই সিরাজুল শাশুড়ির সরলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোপনে জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে গিয়ে ভাতা করিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কতিপয় দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীর মাধ্যমে ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চতুর সিরাজুল ইসলাম দীর্ঘ ৩৮ মাস ধরে নিয়মিত তার ব্যাক্তিগত নাম্বারে বয়স্ক ভাতা তুলেছে । এমনকি ভাতা প্রাপ্তির শুরুতে এককালীন যে পরিমাণ টাকা পেয়েছে তাও কৌশলে সমাজসেবা কার্যালয়ের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীর মাধ্যমে উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে।
সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে মরিয়ম খাতুন (এন আই ডি নংঃ ১৯৩১৩৫৫০৯১ ) এর নামে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে । এ ক্ষেত্রে যে মোবাইল ব্যাংকিং নাম্বারে টাকা পাঠানো হচ্ছে সেটি হল ০১৭৭২৩১২৫৬৫ । অনুসন্ধানে দেখা যায় , এই নাম্বার ও ব্যাংকিং একাউন্ট টি সিরাজুল ইসলামের । নাম্বার যাচাইকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার সত্যতা নিচ্ছিত হওয়া গেছে । এই নাম্বারটি সিরাজুল দৈনন্দিন যোগাযোগের কাজেও নিয়মিত ব্যবহার করে ।
মরিয়ম খাতুন জানান, আমার জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যাবহার করে কে ভাতা তুলছে সেটা আমার জানা নেই । আমি ভাতা শুরুর এককালীন টাকাও পাইনি । আজব্দি কোন ত্রৈমাসিক ভাতাও পাইনি। আমি আমার ছেলেদের মাঝে খাই । ওরাও জানেনা কে আমার নামে ভাতা উত্তোলন করে খাচ্ছে । আমার বয়স হয়েছে অনেক । এখন নানান অসুখ-বিসুখে দিন কাটাচ্ছি । ভাতার টাকা পেলে আমার অনেক উপকার হত। কিন্তু আমি কোন কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছিনা ।
মরিয়ম খাতুনের বড় জামাই শরিফুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এত বড় মোনাফেক আমি জীবনে দেখি নাই । আমাদের অসহায় বৃদ্ধ শাশুড়ির সামান্য ভাতার টাকার লোভ সামলাতে পারেনি আমার ভায়রা ভাই সিরাজুল । অথচ কিছুদিন আগেই আমাদের শ্বশুরের দেওয়া সম্পত্তি যাহা শাশুড়ির নামে ছিল তা বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে সে। এত টাকা পাওয়ার পরেও সামান্য ভাতার টাকা বাটপারি করে খেতে হবে তাকে ? সেতো মানুষ নয় , পশু ।
আপন শাশুড়ির সাথে কেন এই প্রতারণা করেছে জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম কাচুমাচু শুরু করে দেয় । সাংবাদিক কিভাবে জানল সেই প্রশ্ন ঘুরেফিরে বারবার করতে থাকল । এক পর্যায়ে সমাজসেবা কার্যালয়ের অজানা এক কর্মচারীকে মুঠোফোন দিয়ে ঘটনা ধরা পরার কথা বললে, ওপাশ থেকে সিরাজুলকে চেনেনা মর্মে জানিয়ে মুঠোফোন কেটে দেয় । অতঃপর সিরাজুল ঘটনা ধামচাপা দিতে মরিয়া হয় । কিন্তু মরিয়ম খাতুনের প্রাপ্য টাকা ফেরত দিবে কিনা জানতে চাইলে, কয়েকমাস সময় চায় । চলতি রমজান মাসের ১৫ রোজার মধ্যে যে ভাতা আবারো তার মোবাইল ব্যাংকিং নাম্বারে যাবে সেই টাকা কি করবে জানতে চাইলে, মুখে কুলুপ এঁটে চুপ থাকেন ।
কুর্শা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফজালুল হক সরকার বলেন, সরকারিভাবে উপজেলার সব ইউপি’র সব ধরনের ভাতাভোগী ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে যাচাই-বাছাই ও সত্যতা নিশ্চিত করেন সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপরও এমন গুরুতর অনিয়ম তাদের চোখে ধরা পড়েনি। এর দায়ভার সমাজসেবা কর্মকর্তাদেরই নিতে হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা শাহ মোঃ মাহমুদুল হকের কাছে উক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যাক্তি অনলাইনে ভাতার জন্য আবেদন করে, আবেদন করার সময় মোবাইল নাম্বার দিতে হয়। যে নাম্বার দিয়ে আবেদন করে, সেই নাম্বারে ব্যাক্তি ভাতা পায়। এখানে সমাজসেবা অফিস তার নাম্বার পরিবর্তন করে নাই, সুতরাং দায় সমাজসেবা অফিসের নয়।
ইউএনও রুবেল রানা জানান, যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।