নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডানে-বায়ে যেদিকেই চোখ যায়, দেখা মেলে নানা রঙের আলোয় আলোকিত-সুসজ্জিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানে সেবার নামে চলে টেস্ট বাণিজ্য, জালিয়াতি, প্রতারণা, হয়রানি। সেবা কতোটুকু পাওয়া যায় সেখানে, যিনি সেবা নিতে যান তারাই বোঝেন। সরকারি হাসপাতাল থেকে নানা কথা-বার্তায় গ্রামের সাধারণ রোগীদের নিয়ে আসে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। বিনিময়ে নেয় কমিশন। অথচ প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে পুনরায় আসতে হয় ডাক্তারের কাছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধিকাংশেরই অনুমোদন নেই। যে গুলোর অনুমোদন আছে সেগুলোর সেবার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনুমোদনের অনেক শর্তই পূরণ করেনি ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো, নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র, পর্যাপ্ত জনবল। দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ঘিঞ্জি-দুর্গন্ধময় পরিবেশ, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, নাই আধুনিক অপারেশন থিয়েটার মোটকথা সরকারি কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দেদারছে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। সাধারণ রোগীদের কাছ থেকে রক্তের স্যাম্পল নিয়ে মান সম্মত রিপোর্ট দিচ্ছে কিনা তাহাও সন্দেহ রয়েছে। এমনও শোনাগেছে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্যাডে, ল্যাব টেকনিশিয়ান ও ডাক্তারের স্বাক্ষর নিয়ে রাখা ছিলো, পরে ভুয়া রিপোর্ট বানিয়ে রোগীদের হাতে ধরিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা মতে, দেশের যে কোনো এলাকায় ক্লিনিক পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে রেজিষ্ট্রেশন করা সহ মানতে হবে ১০ নির্দেশনা। এ রেজিষ্ট্রেশন প্রতি বছরই জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মাধ্যমে নবায়ন করতে হয়। এ জন্য পাকা এবং ছাদ ঢালাই বিশিষ্ঠ ঘর দেখানো সহ ওই ক্লিনিকে সার্বক্ষনিক তিনজন ডাক্তার, ছয়জন ডিপ্লোমা নার্স, ছয়জন আয়া এবং আগুন নেভানো ম্যাশিনসহ পুরো ক্লিনিক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, জেনারেটর ব্যবস্থা এবং ব্লাড সংরক্ষনের সু-ব্যবস্থা রাখা এবং নির্ভরযোগ্য (এসি) ওটি ব্যবস্থা থাকতে হয়। কিন্তু এসব শর্ত পূরণের কোনই ব্যবস্থা নেই এখানকার ক্লিনিক গুলোতে। একই অবস্থা ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতেও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্লিনিকে দায়িত্বরত প্যাথলজিস্ট বলেন, আমাদের নিজস্ব কোন ডাক্তার নাই, রুগী হলে ময়মনসিংহ থেকে ডাক্তার আসতে বলি অপারেশন করানোর জন্য। প্যাথলজি খোলা থাকে, রোগী আসলেই টেস্ট করাই। লাইসেন্স’র বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো লাইসেন্স পাইনি, দু‘এক মাসের মধ্যেই পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসা চালানোর কথায় বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. রাকিবুল হাসান বলেন, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ইতোমধ্যে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, এতে ২৭ টির মধ্যে ৫টির লাইসেন্স রয়েছে। অন্য গুলোর আপডেট কাগজ-পত্র নেই। ইতোমধ্যে সকল প্রতিষ্ঠানকে কাগজপত্র ঠিক করতে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করে পুনরায় সতর্কও করা হয়েছে। তাদের আর কোন ছাড় দেয়া হবে না। অচিরেই পুনরায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ওইসকল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক গুলোর কাগজ পত্র যাচাই বাছাই করা হবে। এবার যাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া যাবেনা, তাদের স্থায়ীভাবে সিলগালা করে দেওয়াসহ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।