নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত
একুশের চেতনায় ভাষা ও দেশকে ভালোবেসে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে যথাযথ মর্যাদায় নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪ পালিত হয়েছে। মোমবাতি প্রজ্বালন, কবিতা আবৃত্তি ও সঙ্গীত এবং পুষ্পস্তবক অর্পণসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে ভাষা শহিদদের স্মরণ করেছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।
দিবসটি উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চির উন্নত মম শির’-এ মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। একুশের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ০২ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষে উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর কলা ভবন সংলগ্ন শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এসময় ট্রেজারার প্রফেসর ড. আতাউর রহমান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম, কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুশাররাত শবনম, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. রিয়াদ হাসান, রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর, আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. তপন কুমার সরকার, আয়োজক কমিটির সদস্য-সচিব মাসুম হাওলাদারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর দিবসটি উপলক্ষ্যে ‘চির উন্নত মম শির’-এর বেদীতে উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখরের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তর, হল প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু নীল দল, ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, কর্মকর্তা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, কর্মচারী সমিতি (গ্রেড ১১-১৬), কর্মচারী ইউনিয়ন (গ্রেড ১৬-২০), কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, সাংবাদিক ফোরামসহ অন্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে কালো ব্যাজ ধারণ করার মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপরে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। ভাষা শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বেলা ১২টায় প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে দিবসটি উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর।
উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই ভাষা শহিদ, ভাষা সৈনিক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহিদ সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলন ছিল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক। এটি হঠাৎ করে ঘটেনি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান গঠনের পর বঙ্গবন্ধুসহ একদল রাজনৈতিক কর্মী পূর্ব পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করতে কলকাতার সিরাজুদ্দৌলা হোস্টেলে জড়ো হন। পাকিস্তানে একটি নিরপেক্ষ রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি প্রস্তাব সেখানে গৃহীত হয়েছিল। তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান শুরু থেকেই এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।
বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও বিশ্বজয়ের জন্য বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন পরিষদের নেতৃত্বের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে এবং একটি ঐক্যবদ্ধ ঘোষণাপত্রে অবদান রেখে বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৪৯ সালে ভাষা আন্দোলনের একাধিক উদ্যোগে জড়িত থাকার কারণে বঙ্গবন্ধু দুবার আটক হন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সার্বভৌম বাংলাদেশের উদ্বোধনী সংবিধান ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর অনুমোদিত হয়। দেশের প্রথম সংবিধান লেখার জন্য বাংলা ভাষা ব্যবহার করা হয়েছিল। যা ছিল অভূতপূর্ব। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেয়ার মাধ্যমে একটি বিশ্বজয়ী কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছিলেন। বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও বিশ্বজয়ে বঙ্গবন্ধুর এই কাজটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বক্তব্যে উপাচার্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে উদ্যোগ গ্রহণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং একুশের চেতনায় ভাষা ও দেশকে ভালোবেসে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের তাগিদ দেন।
মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস ২০২৪ উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. তপন কুমার সরকারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ট্রেজারার প্রফেসর ড. আতাউর রহমান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম, কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুশাররাত শবনম, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. রিয়াদ হাসান। আলোচনা করেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস, কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি মো. মোকারেরম হোসেন মাসুম, ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফাহাদুজ্জামান মো. শিবলী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪ উদ্যাপন কমিটির সদস্য-সচিব মাসুম হাওলাদার।
দিবসটি উপলক্ষ্যে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও সন্ধ্যা ছয়টায় কেন্দ্রীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।