মনিরুজ্জামান খান, গাইবান্ধা :
গাইবান্ধা জেলার ৭ উপজেলায় নার্সারি করে ভাগ্য বদলে গেছে শতাধিক উদ্যোক্তার। সবচেয়ে বেশি নার্সারি সাদুল্লাপুর,পলাশবাড়ী ,ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা,বাকি উপজেলা গুলোতে সীমিত নার্সারির দেখা মেলে , তবে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেশি নার্সারি সাদুল্লাপুর উপজেলায় ,অনুসন্ধানে দেখা যায় এই উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রাম। নামের সাথে কৃষ্ণ, অর্থাৎ কালো রঙের কথা থাকলেও বাস্তবের চিত্র একেবারেই ভিন্ন । ছবির মতো সুন্দর এই গ্রামের ভিতরে রয়েছে প্রায় শতাধিক বাণিজ্যিক নার্সারি , যেখানে ফুল, ফলসহ বিভিন্ন বনজ উদ্ভিদের চারা রোপণ করে বিক্রি করা হয় । স্থানীয়দের কাছে তাই গ্রামটি নার্সারি পাড়া নামেই অধিক পরিচিত । এখানে নার্সারি করে ভাগ্য বদলে গেছে দুই শতাধিক উদ্যোক্তার? শ্রমিকের কাজের কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় হাজার খানেক লোকের।
এই গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবারের মধ্যে এখন প্রায় ২ শতাধিক পরিবার নার্সারি পেশায় সম্পৃক্ত। এ গ্রামে প্রাতিষ্ঠানিক নার্সারি আছে প্রায় শতাধিক। গ্রামের ফসলের মাঠে ধানের আবাদের পরিমাণ খুবই কম । তাই গ্রামের মাঠে মাঠে এমনকি বাড়ির উঠানেও চারা বিক্রির ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এই গ্রামে ।নার্সারি মালিকরা জানান, কৃষ্ণপুর গ্রাম থেকে বছরে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের গাছের চারা গাইবান্ধা জেলার চাহিদা মিটিয়ে ছড়িয়ে যায় দেশজুড়ে । বছরজুড়ে ট্রাকভর্তি করে চারা সরবরাহ করেন নার্সারি মালিকরা।
নার্সারির মাধ্যমে গোটা গ্রামের মানুষ যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন তেমনি লাখ লাখ গাছের চারা উৎপাদন করে তারা পরিবেশ রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। সরেজমিন দেখা যায়, গ্রামের যেদিকেই চোখ যায় শুধুই নার্সারি আর গাছের চারা। আম, কাঁঠাল, পেয়ারা থেকে শুরু করে দেশি সবধরনের ফল ছাড়িয়ে আপেল, কমলালেবু , মাল্টা, বিদেশি পার্সিমন, , পিনাক বাটার, কিউই, শ্বেতচন্দনসহ বিভিন্ন ফলদ ও ভেষজ গাছের চারা রয়েছে এ নার্সারিগুলোতে।বুজরুক পাকুরিয়া গ্রামের সততা নার্সারির মালিক শহিদুল ইসলাম জানান, একসময় নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা ছিলো তার। ১৯৯০ সালে নিজস্ব ২ একর জমিতে নার্সারি করে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। তার নার্সারিতে প্রায় ১৫০ জাতের চারা রয়েছে। চারা উৎপাদনের পর বিক্রি হচ্ছে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ।
সততা নার্সারি -২ এর উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম জানান- ঢাকা, যশোর ও বগুড়া থেকে উন্নত জাতের চারা-বীজ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এসব চারা পরিচর্যার মাধ্যমে আরও চারা উৎপাদিত হয়। এগুলো জেলার বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পাইকারি মূল্যে কেনেন। এছাড়া স্থানীয়ভাবে খুচরাও বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে শ্রমিক, সার-কিটনাশক খরচ বাদে মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ করছেন তিনি।আয়াত নার্সারির উদ্যোক্তা রেজাউল করিম বলেন, নার্সারি ব্যবসায় লাভ ভালো হয় । চারা তৈরি ও ব্যবসা করে ৮ বিঘা জমি কিনেছেন। পাকাবাড়ি বানিয়েছেন।
আকাশ নার্সারির স্বত্বাধিকারী শাহজাহান কবীর জানান, বাবার কাছ থেকে ১৮ বছর আগে তিনি নার্সারির কাজে হাত দেন। তার নার্সারিতে ৮ জন শ্রমিক কাজ করে। তিনি আম, আমড়া, পেয়ারা, কমলালেবু, মাল্টা, মিষ্টি তেঁতুল, জলপাইসহ ফলদ, বনজ ও ঔষধি বিভিন্ন গাছের চারা উৎপাদন করেন।মাসে তিনি প্রায় দুই থেকে তিন লাখ টাকার চারা বিক্রি করেন।এদিকে গ্রামজুড়ে গড়ে ওঠা এসব নার্সারিতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় কয়েক হাজার শ্রমিকের । পুরুষের পাশাপাশি অনেক নারী শ্রমিকরা এসব বাগানে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। সততা নার্সারিতে কর্মরত আজিরন বেগম বলেন , সকালে নার্সারিতে এসে কাজে যোগ দেই সারাদিন এখানে কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে খুব ভালোভাবে সংসারের খরচ মিটিয়ে জীবন চলে ।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ছোট বড় নার্সারি গড়ে উঠেছে।এসব উদ্যোক্তাদের সব রকমের সহযোগিতার জন্য জেলা কৃষি বিভাগ প্রস্তত রয়েছে বলে জানান।