মনিরুজ্জামান খান গাইবান্ধা:
গাইবান্ধার চার উপজেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায়১৫৫ টি অধিক চর রয়েছে । এরই মধ্য সুন্দরগঞ্জের তিস্তা, সদরের ব্রহ্মপুত্র, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলায় যমুনা নদীর পানি শুকিয়ে জেগে উঠেছে ১৫৫ টি চর। এসব চরে বাদাম চাষ করছেন চাষিরা। গত বছর বাম্পার ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় অনেক চাষিই বাদাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এবারও বাম্পার ফলনের আশা তাঁদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একসময় এসব চরে তেমন কোন ফসল হতো না। কিন্তু বর্তমানে বাদাম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন আবাদের কারণে চরের মানুষের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। এ কারণে চরের জমির দামও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পাল্টে যাচ্ছে চরের মানুষের জীবনমান।সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার সদর উপজেলার কুন্দের পাড়া, কড়াইমারি, রায়দাসবাড়ি, খামারগোঘাট, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার লাটশাল্লা, কাপাসিয়াচর, বালাসেরা, কাজিয়ার, খয়দার এবং ফুলছড়ি উপজেলার এড়েণ্ডাবাড়ির, আলগা, জিগাবাড়ি, গাবগাছি, খাটিয়ামারি চরাঞ্চলে বাদামের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। গাছ দেখে মনে হচ্ছে বালুর ওপর সবুজের সমারোহ।
কৃষকেরা জানান, বাদামের খেত থেকে আগাছা কেটে গবাদিপশুকে খাওয়ানো যায়। তেমন সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। বীজ রোপণের আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যেই সংগ্রহ ও বিক্রি করা যায়। ধানের তুলনায় বেশি লাভজনক হওয়ায় অনেকেই বাদাম চাষে ঝুঁকছেন।জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি উৎপাদন হবে।সদর উপজেলার কড়াইমারির বাদামচাষি রানা মিয়া বলেন, ‘গত বছর ১৫ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করে লাভ করছি। ভালো দাম পাওয়ার আশায় এবার ১৭ বিঘা জমিতে লাগাইছি। আকাশের অবস্থা ভালো হলে এবারও ফলন ভালো হবে।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার খয়দারের বাদামচাষি মো. মকবুল হোসেন বলেন, ‘নদীভাঙন মানুষ হামরা। কয়েকবার আমন ধান লাগাইছিনু। বন্যাত তাক নষ্ট হয়ে গেছে। এখন জমিগুলোত বাদাম করছোম। এসময়োত বন্যা হবা নয়। আর বাদাম মাটির নিচত হয় পোকামাকড় কামড়াবার পায় না। এ আবাদ ভালো। ওষুধপাতি তেমন একটা দেওয়া নাগে না।’এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ‘চাষিরা বাদাম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন আবাদ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এবার চার উপজেলার চরাঞ্চলে ২ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের মধ্যে বিনা মূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করেছি। ভালো ফলনের জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। অনেক জায়গায় আমরা প্রদর্শনী করছি। আশা করছি, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।’