সভ্যতায় শিক্ষার ছোঁয়া
সভ্যতা কতটুকু ছুঁতে পারল আমাদের। আমরাই বা কতটুকু সভ্যতার ধারে কাছে যেতে পারলাম। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা কতটুকু সভ্য হলাম। মানুষ। একটি সামাজিক জীব। সমাজে বসবাস করার তাগিদে। তাকে বিভিন্ন রীতিনীতি মানতে হয়। কিন্তু বর্তমান সভ্যতা এবং আমাদের সমাজ ব্যবস্তা কতটুকু আমাদের মানবিক করতে পারলো। একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া হিসেবে এই প্রশ্নটা নানান সময়ে মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়। আমরা প্রাচীন সভ্যতা থেকে আধুনিক সভ্যতায় পদার্পন করেছি।
প্রাচীন কাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বিভিন্ন বিপ্লব ঘটে গেছে। এরমধ্যে অন্যতম ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব।যার শুরুটা হয়েছিল প্যারিসের পাস্তিল দূর্গ পত়নের মাধ্যমে। এই বিপ্লবের স্লোগান ছিল সাম্য, মৈত্রি স্বাধীনতা। আমার প্রশ্নটা এখানে আরো জোরালো হয়। এখানে যে সাম্যের কথা বলা হচ্ছে এটা আসলে কোন ধরনের সম্যতা? নারী পুরুষের সমতা নাকি সাদা কালোর সমতা নাকি ধর্মের সমতা। যখন একই জনপদে একভাই অন্য ভাইয়ের উপর মিসাইল ছুঁড়ে মারে তখন সাম্য শব্দটা একেবারেই মেকি মনে হয়। আচ্ছা এবার মৈত্রি নিয়ে কিছু বলা যাক। মানুষ স্বভাবতই সৃজনশীল। সে সৃষ্টির উষালগ্ন থেকেই তার সৃজনশীলাতার ছাপ রেখে চলেছে। এর যেমন মানবিক দিক আছে তেমনি হিংস্র দিকও আছে। আর এই হিংস্র দিকটা এমন ভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে যেখানে মৈত্রি পরিনত হয়েছে শত্রুতায়।
যাইহোক এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসা যাক। সেটা হচ্ছে আমাদের শিক্ষা ও সভ্যতা। মানুষের জাগতিক-মহাজনতিক যত জ্ঞান আছে সেগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত বস্তুবাদী দ্বিতীয়ত আধ্যাতিক। যার ফলে ভাববাদের সাথে দর্শনের একটা সংঘাতের সৃষ্টি হয়। কিন্তু আমি মনে করি জ্ঞানের বিচার করা উচিত আদর্শের আলোকে। শিক্ষিত হওয়ার আগে জ্ঞানী হওয়াটা অতীব জরুরি। জ্ঞানী আমরা তাকেই বলতে পারি যে নিজেকে জানে। কারন নিজেকে না জেনে অন্যকে জানাটা আসলে বোকামি ছাড়া কিছুই না। এখানে নিজেকে জানা বলতে মূলত নিজের আত্মাকে জানা সর্বোপরি নিজের শেকড়ের কথা বলা হয়েছে। সংস্কৃতির সকল উপাদানের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সভ্যতা। তাই সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে একটি জাতি কখনোই সভ্য হতে পারে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা কখনোই আমাদের শেকড়কে নিয়ে ভাবিনা। যার ফলে আমাদের সংস্কৃতিও আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এর জন্য অনেকাংশে দায়ী আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। যদিও বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা কতটুকু ফলপ্রসু হবে তা পুরোটাই সময়সাপেক্ষ। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় সাহিত্য সংস্কৃতিকে দূরে ঠেলে দিয়ে জোর দিচ্ছে অনু পরমাণুর ব্যবহারের প্রতি। এতে আধুনিক সভ্যতা মানবিক হওয়ার বদলে ক্রমে হিংস্র হয়ে উঠেছে। ধ্বংস করছে মানুষ মানুষকেই। এটা কখনোই সুখকর নয়।
শিক্ষার মুল কাজ ব্যক্তিকে মানবিক করে তোলা। মানবিকতার মূল বাণী পাওয়া যায় আমাদের ধর্মগ্রন্থ গুলোতে যেটাকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বের সাথে দেখা হয় না। সাহিত্যের সাথে ধর্মের শিক্ষার প্রতি জোর দেওয়া হোক। সেই সাথে জোরালো করা হোক প্রতিটা স্কুল কলেজে সংস্কৃতি চর্চা। তবে বিজ্ঞান চর্চার বিরোধিতা করছি না। আমার চাওয়া হচ্ছে মানবিক হৃদয়ে বিজ্ঞান চর্চা। এর জন্য প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে শিক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রকদের। যারা প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন শিক্ষা পদ্ধতির প্রবর্তন করে থাকেন। যদিও তার সাফল্যমূল্যায়ন করার যোগ্যতা বা ক্ষমতা কোনটাই আমার নেই। কারণ এটা দীর্ঘমেয়াদি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আগামীর ভালোর জন্য আজকের দিনটাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে তবেই আমরা ভালো কিছু আশা করতে পারি।
লেখক: সাঈদ আনসারী
শিক্ষার্থী, নাট্যকলা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়