মনিরুজ্জামান খান গাইবান্ধা: গাইবান্ধা জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে বোরো ধানের চাষ। ইতোমধ্যে সেচযন্ত্র চালু করে কাঁদা মাটিতে সার প্রয়োগসহ চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক। তবে এ বছরে বাড়তি খরচে কৃষকের মাঝে দুশ্চিন্তা। অর্থ সংকট আর খরচের ঊর্ধ্বগতির কারণে কৃষকদের কপালে পড়ছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
সম্প্রতি গাইবান্ধার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়, কৃষকদের কাঙ্খিত বোরো আবাদের চিত্র। অন্যান্য বছরে এই চাষাবাদের সময় কৃষকের মুখে হাসি দেখা গেলেও এ বছর রয়েছে মলিন মুখে। হাল, সার-বীজ, বিদ্যুত, ডিজেল ও শ্রমিকসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর বোরো আবাদের অতিরিক্ত খরচে চরম হিমসিম খাচ্ছেন তারা। চাষাবাদের খরচ জোগাতে অনেকেই ঋণের ফাঁদে পড়ছেন। সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন দরিদ্র কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, চলতি মৌসুমে বীজতলা তৈরির পর কুয়াশায় কিছু চারা নষ্ট হয়েছে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে বিদ্যুতের দামও। বর্তমানে প্রতিবস্তা ইউরিয়া ও টিএসপি সার ১ হাজার ৩৫০ টাকা, এমওপি ১ হাজার টাকা, দস্তা প্রতিকেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এর আগে প্রতিকেজি হাইব্রিড জাতের বীজ ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকায় কিনেছেন কৃষকরা। এছাড়া রোপণের সময় শ্রমিকের মজুরি ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে। তবে কাটা-মাড়াইয়ের সময় শ্রমিক সংকটে দেখা দিলে তাদের মজুরি গুণতে হবে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সসম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বোরো মৌসুমে ১ লাখ ২৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। এ বছরে জেলার সাতটি উপজেলায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২১ হাজার ৩০৫ হেক্টর, সাদুল্লাপুরে ১৪ হাজার ৪০৮ হেক্টর, পলাশবাড়ীতে ১১ হাজার ৮০৯ হেক্টর, সুন্দরগঞ্জে ২৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর, গোবিন্দগঞ্জে ৩১ হাজার ১০৫ হেক্টর, সাঘাটায় ১৪ হাজার ৭০৪ হেক্টর ও ফুলছড়ি উপজেলায় ৮ হাজার ৩০৪ হেক্টর। ওইসব কৃষকের জমিতে সেচ দিতে বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ ৪৬০টি, অগভীর ৩ হাজার ১০৫টি, ডিজেল চালিত অগভীর ৩ হাজার ১৩২টি, এলএলপি সোলার বিদ্যুৎ ৮৪ ও সোলার সেচযন্ত্র রয়েছে ৩৫টি। এসব যন্ত্র দিয়ে বোরো চাষিদের সেচের চাহিদা মেটানো হচ্ছে।
কৃষক আব্দুস ছালাম জানান, গত বোরোতে ১ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করছিলেন। এতে তার সর্বমোট খরচ হয়েছিল হেক্টর প্রতি ৯৭ হাজার টাকা। এ বছর লক্ষাধিক টাকা খরচ হতে পারে। ফলে চলতি মৌসুমে বোরো ধান আবাদের বাড়তি খরচ নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।
বিদ্যুৎ চালিত অগভীর সেচযন্ত্রের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন বলেন, গত বোরো মৌসুমে গৃহস্থদের কাছ থেকে প্রতিবিঘা ১ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। এ বছরের কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রহুল আমিন বলেন, সেচ কাজে কৃষকের কিছুটা খরচ বাড়বে। তবে তাদের লোকসান হবে না। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে ফলন বাড়াতে এবং খরচ কমাতে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, বোরো আবাদে কৃষকদের লাভবান করতে ইতোমধ্যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু জায়গায় সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা বোরো ধান ঘরে তুলে লাভবান হবেন।