আমিনুল হক, সুনামগঞ্জ
আজ ভোটের দিন। ধর্মপাশা-মধ্যনগর-তাহিরপুর-জামালগঞ্জ নিয়ে সুনামগঞ্জ জেলার সর্ববৃহৎ আসন। মৎস-পাথর-ধানের রাজধানী খ্যাত এই আসনটির দিকে সবার নজর। কে হচ্ছেন এই আসনের এমপি। আওয়ামীলীগের মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডে দৌড়ঝাপ কারও কমতি ছিল না। অবশেষে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অ্যাড. রনঞ্জিত নৌকার কান্ডারী হন। তৎপরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ স্বতন্ত্র নির্বাচন করার অনুমতি প্রদান করলে জেলা আওযামীলীগের দুই নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু সুনামগঞ্জ-১ আসনে এবার নৌকার মনোনয়ন পাননি ‘আলোচিত-সমালোচিত’ সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি শক্ত অবস্থান গড়ে তুলছেন। তাঁর মধ্য দিয়ে নৌকার প্রার্থীর ‘শক্ত’ প্রতিদ্বন্দ্বী আরও একজন রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য, সাবেক শ্রমীকলীগ জেলা সভাপতি সেলিম আহমেদ।
এজন্য সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও মধ্যনগর এই চার উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে নির্বাচনী উত্তাপ রযেছে রতন-রঞ্জিত-সেলিম এই তিন প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে।
এক বছর যাবতই আওয়ামী লীগের বিত্তশালী এই তিনজন ভোটের মাঠে সক্রিয় ছিলেন। বড় বড় সভা-সমাবেশ, শোডাউন করেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনজিত চন্দ্র সরকার, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি সেলিম আহমদ। তাঁদের মধ্যে নৌাকার প্রার্থী রনজিত চন্দ্র সরকার তিনিও তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা। গত নির্বাচনেও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে মাঠে ছিলেন। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর দলের অনেক নেতাই এখন নৌকার পক্ষে মাঠে নেমেছেন। তবে নৌকা না পেলেও মাঠ ছাড়েননি মোয়াজ্জেম হোসেন ও সেলিম আহমদ। মোয়াজ্জেম হোসেনের নির্বাচনে লড়ার সাথে নৌকার প্রার্থী রঞ্জিত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম আহমেদ তিনজনই আছেন শক্ত অবস্থানে। এতে ত্রি-মুখী লড়াই হবে বলে ভোটারদের ধারনা।
মোয়াজ্জেম হোসেন কর্মী মর্থকদের নিয়ে সাথে ভালো সম্পর্ক রাখছেন। সেখানে তিনি নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতা-কর্মী ও সুধীজনদের সাথেও সম্পর্ক ভালো বলে জানান ধর্মপাশার ঝিনুক মিয়া। রতন বলেন, তাঁর নির্বাচন নৌকার বিরুদ্ধে নয়; সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাস্তানির বিরুদ্ধে। এই সন্ত্রাসী, মাস্তান কে বা কারা, সেটি তিনি স্পষ্ট করেননি। এই আসনে প্রার্থীরা হলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের নবাব সালেহ আহমদ, জাতীয় পার্টির আবদুল মান্নান তালুকদার, তৃণমূল বিএনপির মো. আশরাফ আলী, গণফ্রন্টের মো. জাহানুর রশিদ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) মো. হারিছ মিয়া। তবে জাতীয় পার্টিও আব্দুল মান্নান নির্বাচন থেকে সংবাদ সম্মেলন করে সরে দাড়ালেন।
নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর দলের নেতাদের অনেকেই রনজিত সরকারের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন । তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর, ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ গত ১৫ বছর মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা এখন রনজিত সরকারের পক্ষে সক্রিয়। তাঁদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে আবার কেউ কেউ তলেতলে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানান ভোটাররা। দলের নেতা-কর্মীরা জানান, ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগে উঠে আসা রনজিত সরকারের রাজনীতি সিলেট কেন্দ্রিক। এলাকায় মূলত নির্বাচন, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে তিনি আসেন। তবে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল সব সময়ই। অন্যদিকে মোয়াজ্জেম হোসেন টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। নির্বাচনী এলাকার সবখানেই তাঁর অবস্থান আছে। নিজের বলয় আছে চার উপজেলাতেই। তিনি সবাইকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। এদিকে সেলিম আহমদও নির্বাচনী প্রচারণা করেছেন জোরেশোরে। তাহিরপুর উপজেলায় তাঁর বাড়ি। তরুণদের নিয়ে তিনি পুরো নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়িয়েছেন। স্থানীয় লোকজন বলছেন, রনজিত সরকারের বড় শক্তি নৌকা ও দল। এটিকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন। অন্যদিকে মোয়াজ্জেম হোসেন তিনিবারের টানা সংসদ সদস্য। নির্বাচনী এলাকার সব প্রান্তে তাঁর যোগাযোগ আছে। সেলিম আহমদও নানাভাবে এলাকায় সক্রিয় ছিলেন। যে কারণে তিনজনই নির্বাচনী মাঠে শক্ত প্রভাব ফেলেছেন।