নীলফামারী প্রতিনিধি:

খুব বেশিদূর দেখা যায় না। শীতল বাতাসে হাড় কাঁপুনি দিয়ে উঠে। খেজুর রসের মন মাতানো ঘ্রাণ। শিউলিসহ বাহারি ফুলে ভরে ওঠে পথঘাট, বাড়ির আঙিনা। ঘাসের ওপর শিশির কণা, তাতে আবার সূর্যের সোনালি আলো পড়ে সৃষ্টি হয় মুগ্ধতার আভা।

প্রতিটি ঘরে চলে পিঠা-পুলি বানানোর তোড়জোড়। খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে উত্তাপ গ্রহণের দৃশ্য- এ সবকিছু জানিয়ে দেয় শীতের আগমনী বার্তা।

শীত এলে প্রকৃতি তার রূপ বদলাতে শুরু করে। গাছের পাতা ঝরে পড়তে শুরু করে হলদে হয়ে। চারপাশটা কেমন জানি নিস্তব্ধতায় ভরে যায়। প্রকৃতি তার চির সবুজ প্রাণ হারিয়ে ফেলে। শুষ্কতা বিরাজ করে সর্বত্র। প্রকৃতির মতো শীতকাল মানুষের জীবনেও মলিনতার ছাপ ফেলে। সহ্য করতে হয় হাড় কাঁপানো শীত।

শীত এলেই অলিগলির ছোট দোকান থেকে শুরু করে শহরের বড় শপিংমলগুলো ভরে ওঠে রঙ-বেরঙের শীতবস্ত্রে। কিন্তু ছিন্নমূল পথশিশুটির এবারও শীতের জামা কেনার সৌভাগ্য হবে না। সে দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষদের একজন। মুখ ফুটে বলতে পারে না তার ইচ্ছার কথা। কথায় আছে, বুক ফাটবে তবু মুখ ফুটবে না। না বলা থেকে যায় এমন হাজারও গল্প।

সমাজের এসব ছিন্নমূল মানুষের না বলা কথা, না বলা অনুভূতি অনুভব করতে পেরেছে একদল তরুণ। ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ নীলফামারী জেলার ভলান্টিয়ারা গড়ে তুলেছে এক অভিনব দেয়াল, নাম তার- ‘উষ্ণতার দেয়াল’। কেউ কেউ বলে ‘মুক্ত দেয়াল’, আবার অনেকে একে ডাকে ‘মানবতার দেয়াল’ নামে।

নাম ভিন্ন হলেও কাজ তাদের একই- ছিন্নমূল মানুষের জন্য শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করা। উষ্ণতার দেয়ালে মানুষজন তাদের অপ্রয়োজনীয় জামাকাপড়, প্রয়োজনের অতিরিক্ত শীতবস্ত্র ইত্যাদি দিয়ে যায়; আর যাদের প্রয়োজন তারা নিজের পছন্দমতো জামাকাপড় নিয়ে যায় বিনামূল্যে।

শীতে যেন আর কেউ কষ্ট না পায় এটাই উষ্ণতার দেয়ালের একমাত্র লক্ষ্য। উষ্ণতার দেয়ালের একপাশে লেখা আছে- ‘আপনার অপ্রয়োজনীয় বস্তু দিয়ে যান’; আরেক পাশে লেখা আছে,“প্রয়োজনীয় বস্তু নিয়ে যান’।

এসময় ইভেন্টে উপস্থিত ছিলেন সাকিল ইসলাম, প্রসিডেন্ট ভিবিডি নীলফামারী জেলা, ভাইস প্রেসিডেন্ট রুবি বানু, সেক্রেটারি রইসুল ইসলাম রানা,প্রজেক্ট অফিসার মাহামুদুল হাসান,হিউম্যান রিসার্চ অফিসার সাখাওয়াত হোসেন, ট্রেজারার মুছা ইসলাম,জান্নাতি আক্তার সিএম,মুজাহিদ আলী শাহ্ আসমান সিএম,মনিরুজ্জামান মুজাহিদ সিএম,সায়েম ইসলাম সিএম,জিয়ন ও সুজন ইসলাম সিএম।

উক্ত ইভেন্ট ৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ২০২৪ সকাল ১১ টায় নীলফামারী শহরের পিটিআই মোড়ে ১২ জন ভলান্টিয়ারের অংশগ্রহণে সম্পন্ন হয়।

উল্লেখ্য যে,উক্ত ইভেন্টে দুজন লিডাররে দায়িত্বে ইভেন্ট পরিচালনা করা হয়।ইভেন্ট লিডার রুবি বানু।কো- লিডার মুছা ইসলাম।

উষ্ণতার দেয়াল নিয়ে ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ নীলফামারী জেলার প্রেসিডেন্ট সাকিল ইসলাম বলেন, খুবই প্রশংসনীয় একটা উদ্যোগ। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর জন্য এ উদ্যোগ যদি সব জায়গায় ছড়িয়ে দেয়া যায় এবং চলমান থাকে, তাহলে আমরা বড় ধরনের একটা পরিবর্তন দেখতে পাব বলে আশা রাখি।

ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ নীলফামারী জেলার ভাইস প্রেসিডেন্ট রুবি বানু বলেন, এটা একটি সামাজিক ও মানবিক কাজ। ছিন্নমূল মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটাতে তাদের দুঃখগুলো ভাগ করে নেয়ার মতো একটি জায়গা।

ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ নীলফামারী জেলার সেক্রেটারি রাইসুল ইসলাম রানা বলেন, উষ্ণতার দেয়াল হল মানবতার জয়ধ্বনি।
শীতকালে দরিদ্র মানুষের মাঝে সরকারিভাবে কম্বল ও শীতের কাপড় বিতরণ করা হয়। তারপরও অনেক মানুষ শীতার্ত থেকে যায়। তাই সচেতন মানুষ যদি এগিয়ে এসে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে এই সুবিধাবঞ্চিতরা কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পাবে।
আর এভাবেই মানবতার দেয়াল ছড়িয়ে পড়ছে দেশের আনাচে-কানাচে, মানবতার আহ্বান জানাতে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানাই সমাজের ওই তরুণদের, যারা মানুষের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নেয়।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version