তাসলিমুল হাসান সিয়াম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি : উজান থেকে আসা ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী যার এক পাশে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। মাঝখানে গড়ে ওঠা এই চরগুলোতে কয়েক হাজার বাসিন্দার বসবাস । শহরের সাথে এসব চরের যোগাযোগের একমাত্র উপায় নৌকা ও ঘোড়ার গাড়ি । নদী পার হয়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয় চরের গ্রামে। স্বাস্থ্য, শিক্ষায় এখনও পিছিয়ে চরাঞ্চলের মানুষ।
তাই চরের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে গাইবান্ধার ১৬৫ টি চরে বসবাসরত মানুষের। তারা বলছেন, সবচেয়ে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা । শিক্ষা,স্বাস্থ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ মৌখিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত এসব মানুষেরা তাই দেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই সাধারণ ভোটারদের।
ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে গাইবান্ধা জেলার উত্তর ও পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা,ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী । এসব নদীর বুকে জেগে উঠা ১৬৫ টির অধিক চরে বসবাস করছে গাইবান্ধা সদর , সুন্দরগঞ্জ , সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার কয়েক লাখ ভোটার ।
বিগত কয়েক দশকে চর অধ্যুষিত সংসদীয় আসন গাইবান্ধা -৫ , গাইবান্ধা -১ ও গাইবান্ধা -২ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও চরবাসীদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি ।
নদী ভাঙ্গন, বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত এই জনপদগুলোতে প্রতিমুহূর্তে চলে টিকে থাকার লড়াই । এখানে মানুষের আয়ের মূল উৎসই কৃষি। খরা মৌসুমে নদীর পানি শুকিয়ে এলে বিস্তীর্ণ বালুচরে, ভুট্টা,মরিচ,বাদাম ও মিষ্টি কুমড়া চাষ ও গবাদি পশু লালন পালন করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয় । তবে, উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে কৃষকদের বরাবরের ক্ষোভ। তাদের অভিযোগ, লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলছে সরকার এখনো পর্যন্ত চর এলাকায় হিমাগার কিংবা বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন না করায় নামমাত্র মূল্যে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে ।
ফলে ফড়িয়া-দালালদের দৌরাত্মে ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না তারা। এই সমস্যা অনেকদিনের। প্রশাসন থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি সবাই কথা দেয় সমস্যা সমাধানের। কিন্তু ফসলের বেচাকেনা নিয়ে দুষ্টচক্রের কর্মকাণ্ড আর বন্ধ হয় না বলে অভিযোগ চরবাসীদের।
নাব্যতা সংকটে গাইবান্ধার বালাসীঘাট থেকে জামালপুরের বাহাদুর বাদ ঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকাটাও মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে। এই সব অনুষঙ্গ প্রভাব ফেলবে আগামী নির্বাচনে।
ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের পশ্চিম খাটিয়ামারি চরের ৫৩ বছর বয়সী বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ছোট থেকেই চরে বসবাস করছি । শহর এলাকায় যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে চর এলাকায় তার ছিটেফোঁটাও হয়নি । আমাদের চরে বছরের পর বছর কেটে গেলেও কোন সংসদ সদস্য আসে না । শুধু নির্বাচনের সময় তাদের দেখা মেলে । এমন অনেক প্রার্থী আছে যারা এখনো আমাদের এলাকায় প্রচারণা চালাতেও আসেনি ।
সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দের পাড়া চরের বাসিন্দা একরামুল করিম বলেন , আমার প্রায় ৯ টি গাভী আছে । প্রতিদিন খামারে ১৫-২০ লিটার দুধ হয় কিন্তু দুধ বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকায় ৬০ টাকা লিটারের দুধ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে ।
নদী বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা ইয়ুথ নেট গ্লোবালের গাইবান্ধা শাখার পরিচালক মারুফ আহমেদ, বলেন, চরবাসীদের ভাগ্যের উন্নয়নে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত । এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে ।