তাসলিমুল হাসান সিয়াম,গাইবান্ধা প্রতিনিধি:আবহমান কাল থেকে নির্বাচন আসলে গ্রামের বিরাজ করে নির্বাচনের আমেজ। প্রার্থী আর ভোটারদের মাঝে চলা নানা হালচাল নিয়ে উত্তপ্ত হয় চায়ের দোকান। চায়ের চুমুকে প্রার্থীদের চুলচেরা বিশ্লেষণ পরিপন্ন হয় নানান বয়সী মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই সুযোগে বেচা-বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় ব্যস্ত সময় পার করে দোকানিরা।
তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গাইবান্ধার ৫ টি সংসদীয় আসনের চিত্র একেবারই ব্যতিক্রম। গাইবান্ধার প্রায় প্রতিটি সংসদীয় আসনেই হেভিওয়েট প্রার্থীর সংখ্যা এক থেকে দুই জন।ত্রিমুখী প্রতিদন্দ্বিতার সম্ভাবনা না থাকায় অনেকটা নির্ভার হেভিওয়েট প্রার্থীরা। এছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা কর্মীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কোন আগ্রহ নেই ।
২৭ ডিসেম্বর বুধবার গাইবান্ধা -২ সদর আসনের পৌর এলাকা ,রামচন্দ্রপুর, সাহাপাড়া ও বোয়ালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়ে। খোঁজ নিয়ে দেখা শোনা যায় জেলার অন্য ৪ টি আসনেও নেই নির্বাচনী উত্তাপ।
জানা যায় আগামী ৭ ই জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটের মাঠে গাইবান্ধা জেলার ৫ টি আসনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৩৫ জন প্রার্থী ।
প্রতিটি আসনে প্রার্থীর সংখ্যা দীর্ঘ হলেও নির্বাচনে অংশ নেয়া মহাজোট সমর্থিত জাতীয় পার্টি ও নৌকার প্রার্থী, কয়েকটি আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী অন্যসব প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে অপরিচিত। প্রার্থীদের রাজনৈতিক পরিচিতি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দলীয় কিংবা ব্যক্তি ইমেজ স্থানীয় ভোটারদের দৃষ্টি আর্কষণ কিংবা সহজে মন জয় করে নেয়ার ব্যতিক্রমী বিশেষণ ও গুণ এমন প্রার্থীর পরিসংখ্যান খুবই কম।
তাছাড়া নানা কারণে বিএনপি, জামায়াত ও তাদের সমমনা দল নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় এ জেলার সংসদীয় আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী হেভিওয়েট প্রার্থী নেই বললেই চলে।
গাইবান্ধা -১ সুন্দরগঞ্জ আসনে মোট ১০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও শুধুমাত্র ৪ জন বাদে বাকি সব প্রার্থীই ভোটারদের কাছে অনেকটাই অচেনা। আসনটিতে ঐ ৬ জন প্রার্থী নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই ভোটারদের। ভোটাররা বলছেন নির্বাচনে তাদের ডামি প্রার্থী দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে ওই দলগুলো। তারা বলছেন অন্যান্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়লেও তাদের তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা নেই।
গাইবান্ধা -২ সদর আসনে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা থাকলেও ভোটের মাঠে সক্রিয় দুই প্রার্থী । নির্বাচনে লড়াইয়ে প্রতীক পেলেও বাকি তিনজন প্রার্থীরা
।এদের মধ্যে মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী অনেকটা নির্ভারভাবেই প্রচারণা চালাচ্ছেন । এই আসনে আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝেও নেই নির্বাচনী আমেজ ।
একই অবস্থা জেলার অন্য তিনটি সংসদীয় আসনের। গত সংসদ নির্বাচনগুলোতে শহর থেকে গ্রামগঞ্জের হোটেল গুলোতে নির্বাচন নিয়ে ব্যপক কৌতুহল,আলোচনা সমালোচনা চললেও এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র । পড়া মহল্লার অলিতে গলিতে নেই ঝুলন্ত পোস্টার কিংবা সাদাকালো ব্যানার ।
নির্বাচনের সরগরম সময়েও গ্রামের চায়ের কাপের ঝড়ে টুংটাং শব্দের বদলে ঝিমিয়ে পড়েছেন দোকানিরা।
দোকানিরা জানান, প্রার্থীদের গণসংযোগ কিংবা প্রচার সামগ্রী না থাকায় ভোটারদের মাঝে নির্বাচনের কোনো প্রভাব নেই। বেচা-বিক্রিও বাড়েনি।
গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালিব বলেন, জেলার পাঁচটি আসনে সাতটি উপজেলার ৮১ টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভায় ৬৪৬ টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ওইসব কেন্দ্রে ২০ লাখ ৫২ হাজার ৬৯৮ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষে প্রশাসন সকল প্রস্ততি নিচ্ছেন।