কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন : আসন্ন ৭ জানুয়ারী-২০২৪ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোণা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনে নির্বাচনী প্রচারণায় কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক তালুকদার, কৈলাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন কর্তৃক নির্বাচনী কাজে বাঁধা প্রদান করার নির্দেশনা ও দলীয় নেতা-কর্মী কর্তৃক হুমকী প্রদান, অপ-প্রচার এবং নৌকার প্রার্থী বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারণায় উস্কানীমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন একই আসনের স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস আরা ঝুমা তালুকদার।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে তিনি দুর্গাপুরের নিজ ভবন দক্ষিণ পাড়ায় এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ঝুমা তালুকদার দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগের সাবেক সদস্য এবং একই আসনের তিনবারের প্রাক্তন সাংসদ বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম জালাল উদ্দিন তালুকদারের কন্যা।
অন্যদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হলেন মোশতাক আহমেদ রুহীর। তিনি এ আসনের একবারের প্রাক্তন সাংসদ ও ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন সরকারি কলেজের (আমোকসু) সাবেক ভিপি ছিলেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ১৯ ডিসেম্বর দুর্গাপুর পৌরসভার তেরীবাজার এলাকায় নির্বাচনী জনসভায় ও কুল্লাগাড় ইউনিয়নের রাশিমনি এলাকায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাক আহমেদ রুহী তার বক্তব্যে, ‘আমি সন্ত্রাসীদের বাপ’ বলে উপস্থিত জনতাকে উস্কানী দেয় এবং ‘কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’ এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এছাড়া একই তারিখ বিকেল ৫টার দিকে কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি ফারুক ও সহ-সভাপতি খাইরুল ইসলাম কৈলাটি বাজার ও পাগলা বাজারে আমার প্রচারণার মাইকিং করতে গেলে তাদের নিষেধ প্রদান করে।
গত ২১ ডিসেম্বর নাজিরপুর ইউনিয়নের রহিমপুর বাজারে ট্রাক প্রতীকের নির্বাচনী অফিসে কাজ করার সময়ে যুবলীগ নেতা বাচ্চু মিয়াসহ আরও চার-পাঁচজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ঘটনাস্থলে প্রবেশ করে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীর শার্টের কলার ধরে টেনে হিচড়ে অফিস থেকে বাহির করে রাস্তায় নিয়ে মারধর করে ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকী প্রদান করে। এমনকি ওই অফিসের দায়িত্বে থাকা আরেক কর্মী মাসুদ মিয়াকে তার বাড়ি যাওয়ার পথে আটকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকী দেওয়া হয়।
গত ২২ ডিসেম্বর কলমাকান্দা উপজেলার সিধলী বাজারে বিকাল ৪টার দিকে নির্বাচনী জনসভায় কলমাকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক তালুকদার ও কৈলাটি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন তাঁদের বক্তব্যে স্বতন্ত্রপ্রার্থীর কোন প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেওয়া হবে না বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন এবং ট্রাক প্রতীকের কর্মীদের চিহ্নিত করতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেন। একই সময়ে সিধলী বাজারে স্বতন্ত্রপ্রার্থীর টানানো পোস্টার ছিড়ে ফেলেছে। এছাড়া স্বতন্ত্রপ্রার্থী শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়াবে এ ধরনের অপ-প্রচার চালানো হচ্ছে।
এসব বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঝুমা তালুকদার প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, রিটার্নিং ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তাগণকে মৌখিকভাবে অবগত করেছি। তবে এ ব্যাপারে আজ (শনিবার) লিখিত অভিযোগ দাখিল করান কথা জানান।
এ ব্যাপারে দুর্গাপুরের সহকারি রির্টানিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, মৌখিকভাবে অভিযোগ নেওয়ার সুযোগ আছে কি? লিখিতভাবে পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মৌখিকভাবে জানালে সেখানে ফোর্স পাঠানো হয়। প্রকশ্যে হলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। আর প্রকাশ্যে বা আমাদের সামনে না ঘটে সেক্ষেত্রে ইলেকশন ইনকোয়ারি কমিটিকে অবগত করা হয়। তারা যাচাই বাছাই করে রিপোর্ট আকারে কমিশনে দাখিল করেন।
আরেক সহকারি রিটানিং কর্মকর্তা ও কলমাকান্দার ইউএনও আসাদুজ্জামান বলেন, মৌখিকভাবে জানালে উপজেলা পরিষদ ও কৈলাটি ইউপি চেয়ারম্যানদ্বয়কে মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি। তারা প্রতিশ্রতি দিয়েছেন। কৈলাটি ইউপি চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যানকে নির্বাচনী কাজে সরকারি গাড়ী ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং ডিডি এলজি মহোদয়ও তিনি তাকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
নৌকার প্রতীকের প্রার্থী মোশতাক আহমেদ রুহীর মোবাইলে একাধিকাবার দিয়েও ফোন না ধরায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।